রোজার আগে চিনি উৎপাদনে ফিরতে ব্যাংকের সহযোগিতা চায় দেশবন্ধু গ্রুপ
কাঁচামালের অভাবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সুগার রিফাইনারি (চিনি পরিশোধন) বন্ধ রেখেছে দেশবন্ধু গ্রুপ। ব্যাংকের সহযোগিতা পেলে আসন্ন রমজানের আগেই সুগার রিফাইনারি চালু করে বাজারে চিনি সরবরাহ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় অবস্থিত দেশবন্ধু গ্রুপের কয়েকটি কারখানা পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে অপরিশোধিত, পরিশোধিত চিনি আমদানি করতে পারছে না। যে কারণে সুগার রিফাইনারি বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ২০১৭ সাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ২০১৯ সাল থেকে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ২০২৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করছে দেশবন্ধু গ্রুপ। তিনটি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণের বেশিরভাগ পরিশোধ করা হলেও কিছু টাকা খেলাপি, যে কারণে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে পারছে না।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে খেলাপি হয়ে পড়া ঋণগুলো রি-শিডিউল করতে চাইলেও ব্যাংক সে সুযোগ দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটিকে।
গ্রুপটির দাবি, তাদেরকে সাপ্লাইয়ার ক্রেডিট কন্ট্রাক্টের আওতায়ও কাঁচামাল আমদানি করতে সহায়তা করছে না ব্যাংকগুলো। যদিও এতে ব্যাংকগুলোর কোনো প্রকার দায় সৃষ্টি হয় না।
এ বিষয়ে দেশবন্ধু গ্রুপের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও গ্রুপ সিএফও এম এ বশির আহমেদ দাবি করেন, "এই ব্যাংকগুলো অন্য অনেকের ঋণ রি-শিডিউল করলেও আমাদেরকে সে সুযোগ দিচ্ছে না। যদিও আমরা সব ধরনের নিয়ম কানুন মেনেই রি-শিডিউলের আবেদন করেছি। কেন দিচ্ছে না সে বিষয়েও ব্যাংকগুলো কোনো ব্যাখ্যা আমাদেরকে জানায় না।"
তিনি বলেন, "সামনে রমজান মাস, সে সময় আমরা যদি চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাই তাহলে এখনই আমাদের র-সুগার আমদানির বিকল্প নেই। এর জন্য আমাদের ব্যাংকের সহযোগিতা জরুরি। কিন্তু সেটা আমরা পাচ্ছি না।"
এদিকে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান টিবিএসকে বলেন, "আমাদের ডলার সংকট নেই এবং আমরা এলসি খোলার অনুমতি দিচ্ছি। তবে দেশবন্ধু গ্রুপ আমাদের ব্যাংকের ঋণের লিমিট ছাড়িয়ে যাওয়া ঋণ খেলাপি হয়েছে। তাদের বেশ কিছু কমপ্লায়েন্স সমস্যাও রয়েছে। এলসি খোলার জন্য তাদের অবশ্যই ঋণের লিমিট এবং কমপ্লায়েন্স মেনে চলতে হবে।"
"মাঝে মাঝে, এই গ্রুপ আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করারও চেষ্টা করে," যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি নরসিংদীর পলাশে উপস্থিত দেশবন্ধু গ্রুপের কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে পানি, বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিং, কোল্ড ড্রিংকসের বোতল উৎপাদন ও দেশবন্ধু পলিমার কারখানা চালু রয়েছে। শুধু বন্ধ রয়েছে সুগার রিফাইনারি।
সুগার রিফাইনারি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অন্য কোম্পানি থেকে চিনি এনে কোল্ড ড্রিংকস উৎপাদন করছে, প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানি করতে না পেরে সেটিও স্থানীয় একটি কোম্পানি থেকে কিনে কারখানা চালু রেখেছে।
জানা যায়, দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার রিফাইনারিতে প্রতি বছর ৩ লাখ টনের মত চিনি রিফাইন করা হয়। চিনি সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার ১৫ শতাংশ বলে জানান কর্মকর্তারা।
দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন, এইচআর, অ্যাডমিন এবং কমপ্লায়েন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো: জাকির হোসেন বলেন, "কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় আমরা চিনির কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। পলিমার, ড্রিংকসসহ অন্য কারখানাগুলোর উৎপাদনও দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কম করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে ব্যাংক যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ যেমন হুমকিতে পড়বে, তেমনি কয়েক হাজার মানুষ তাদের কর্মসংস্থানা হারাবে।"