১০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগে উৎপাদন ৩ গুণ বাড়াতে চায় চট্টগ্রামের রিলায়েন্স ক্যান ইন্ডাস্ট্রিজ
স্থানীয় বাজারে পেইন্ট ও লুব্রিকেন্ট ক্যান উৎপাদনকারী চট্টগ্রামের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ক্যান ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রাইভেট) লিমিটেড (আরসিআই) আগামী বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে (বিএসএমএসএন) ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে এর দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করতে যাচ্ছে।
শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে রিলায়েন্সের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৭০ লাখ পিস ক্যান। তবে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ২.১০ কোটি পিস ক্যান হবে বলে আশা করছেন তারা।
রিলায়েন্স ক্যান ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পেইন্ট এবং লুব্রিকেন্ট জারের পাশাপাশি, নতুন কারখানাটি ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রসাধনী এবং আইসক্রিমের জন্য প্যাকেজিং আইটেম তৈরি করবে।"
এছাড়া, ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে রিলায়েন্স বিদেশে পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনাও করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
১৯৯৪ সালে আট লাখ টাকা মুলধন নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় যাত্রা শুরু করেছিল রিলায়েন্স। শুরুতে মেটাল ক্যান প্রস্তুত করলেও ২০০০ সালে নতুন বিনিয়োগে পেইন্ট এবং লুব্রিকেন্ট এর প্লাস্টিক ক্যান উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এটি দেশি বিদেশি ১০ টির বেশি পেইন্ট ও লুব্রিকেন্ট কোম্পানির জার উৎপাদন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক তালিকায় রয়েছে- এশিয়ান পেইন্ট, বার্জার পেইন্ট, কেনসাই নেরোল্যাক পেইন্টস, মুন স্টার রেকিট বেনকিজার, গ্লোবাল অয়েল, লুব্রিকেন্ট এশিয়া, প্যাসিফিক অয়েল, মুন স্টার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে উৎপাদন বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির।
একরামুল হক জানান, ২৫০ জন শ্রমিক বর্তমানে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায়। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের নতুন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অন্তত আরও ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
আরসিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রঙ এবং লুব্রিকেন্ট ক্যান প্রস্তুত খাতে বাংলাদেশের মোট বাজার আকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এতে রিলায়েন্সের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই অবদান ২৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সেক্রেটারি জেনারেল নারায়ণ চন্দ্র দে রিলায়েন্স ক্যান ইন্ডাস্ট্রির নতুন বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে এই খাতের শিল্পগুলোতে প্লাস্টিকের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।
বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে যেভাবে ব্যবসায় ফিরে পেল আরসিআই
২০১১ সালে আরসিআই প্রতিষ্ঠাতা একেএম এনায়েত উল্লাহর শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হয়। শারিরীক অসুস্থতার কারণে ব্যবসায় ক্রমাগত ধ্বস নামতে থাকে। ২০১৩ সালে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় আরসিআইয়ের কার্যক্রম।
এনায়েত উল্লাহর ছেলে একরামুল হক তখন লন্ডন থেকে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরেছেন। ওই সময়ে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসবে, এই ভেবে আইন পেশায় না গিয়ে ব্যবসার হাল ধরেন তিনি।
"আইন পেশায় না গিয়ে আমাকে ২০১৪ সালে ব্যবসার হাল ধরতে হয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছি। কারখানায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপার্টদের হায়ার করি; অবকাঠামো এবং প্রযুক্তগত পরিবর্তনও এনেছি কারখানায়," বলেন একরামুল।
তিনি যখন ব্যবসায়ের দায়িত্ব নেন তখন কোম্পানির মাসিক বিক্রি ছিল ১ কোটি টাকা। সেখান থেকে এখন বিক্রি ৫ কোটি টাকায় উন্নীত করেছেন একরামুল। এছাড়া, আগে একটি প্রোডাক্ট বের হতে সময় লগতো ১ মিনিট। সেটি এখন ২৮ সেকেন্ডে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
"আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেও প্র্যাকটিস করতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে। ব্যবসার ধরাবাহিকতা না থাকলে পরিবার বিপর্যয়ে পড়তো। তাই নিজের সখকে বিসর্জন দিয়ে ব্যবসাকে ব্রত হিসেবে নিয়েছি। এখন আমার স্বপ্ন এই সেক্টরকে ঘিরে। আরসিআই'কে বাংলাদেশের টপ ৩ ইনোভেটিভ প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছি," যোগ করেন একরামুল।