ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে মধ্যে ব্যবসায়িদের মেয়াদী ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধযোগ্য মেয়াদী ঋণের মাত্র ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি হবে না মর্মে সুযোগ দেওয়া হয়।
সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বকেয়া অংশ চলতি ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তিতে এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সার্কুলার ইস্যু করে সকল তফসিলি ব্যাংকের এমডিদের কাছে পাঠিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলারে বলে, বহিঃবিশ্বে যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে তারল্য সংকেটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মার্কেটে যেই ব্যাংকগুলো প্রাইম লেন্ডার ছিল তারাও এখন ঋণের উপরে আছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের ঋণ আদায়ে ছাড় দেওয়া অযৌক্তিক।"
তিনি আরও বলেন, "ব্যবসায়ীরা কেভিডের কারণে দুই বছরে নামমাত্র ঋণ পরিশোধ করেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাপক আমদানি বেড়েছে। তার মানে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো ছিল। তারপরও ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া অযৌক্তিক।"
"এভাবে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলে ব্যাংকেগুলোর চলতে কষ্ট হবে। কারণ ব্যাংকগুলোই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে ধার নিয়ে তারল্য সংকট মেটাচ্ছে," বলেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা কোভিডের কারণে ২০২০ সালে কোনো ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি হয়নি। এরপরের বছর সকল ধরনের ঋণের মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপি থেকে রক্ষা পেয়েছিল ঋণ গ্রহীতারা। তবে চলতি বছরে ছাড় কিছুটা কমিয়ে ঋণের ৭৫ শতাংশ পরিশোধের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। একইসঙ্গে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল আমানতের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।
এছাড়া রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানির পরিমাণ ব্যয় বেশি হওয়ায় অধিক ডলার কিনতে গিয়ে ক্যাশ টাকার ব্যবহার হয়েছে; যার কারণে মার্কেটে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।
মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সূচকের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য মাত্র তিন মাসে ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমে সেপ্টেম্বরে ১.৭০ লাখ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বিকেএমইএ এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেমসহ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তারা ঋণ পরিশোধে সুবিধাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। তারপরই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, "ব্যাংকগুলোকে [ঋণের] কিস্তি পরিশোধ করতে হবে আমাদেরকে দিতে হবে। এরমধ্যে কর্মীদের ডিসেম্বরের বেতন পরিশোধ করাই আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আমাদের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছি।"
ব্যাংক কেন তাদের আবার বাড়তি সময় দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কাঁচামাল ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের অবস্থা এখন কোভিডের সময় যেমন ছিল তারচেয়েও খারাপ। দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। আর গ্যাসের সংকটের কারণে আমরা কারখানা চালাতে পারছি না। এখন যদি আমি কারখানা চালাতে না পারি এবং কাঁচামাল আনতে এলসি খুলতে না পারি, তাহলে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করব কীভাবে?"
জসিম উদ্দিন আরো বলেন, তাদের কোভিড-সময়ের মতো ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোসহ নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।