শ্রীলঙ্কাকে ঋণ পরিশোধে ছয় মাস সময় বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বৈদেশিক ঋণের চাপে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধের কথা ছিল চলতি বছরের মার্চের মধ্যে। গত অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বৈঠক শেষে বলেন মার্চের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। ২০২১ এর ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ প্রথম কিস্তিতে শ্রীলঙ্কাকে ৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে গত ৩০ আগস্ট। পরবর্তীতে আবার ৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকালের বোর্ড সভায় চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির নীতিগত অনুমোদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্য সরবরাহ ঠিক রাখা মুদ্রানীতির মূল কাজ। তবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ এখনো চলছে। বৃহস্পতিবার বোর্ড সভায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। যেহেতু এখনো চূড়ান্ত হয়নি তাই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। ১৫ জানুয়ারি সবাইকে জানাতে পারব।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে যা ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন কিছুটা কমানো হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং জুলাই মাসে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২২) ব্যাংক থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। তবে অন্যদিকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ শোধ করেছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
আগে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করতেন। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর তা এক বছরের জন্য করা হয়।
তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতি অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি ঘোষণা করেন বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির। নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয় আগের মতো আবারও প্রতি ছয় মাস পরপর মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে। অবশ্য বছরে দুটি মুদ্রানীতি দেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত রয়েছে।