আমানতের ৯% ও ঋণের সুদহার ১২% করলে ভালো হতো
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের ক্যাপ তুলে দিয়েছে। এটি একদিক দিয়ে ভালো, তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেন্ডিং রেট ক্যাপ তুলে দেওয়ার দরকার ছিল; নয়তো ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের হার যথাক্রমে ৯ এবং ১২ শতাংশ করলে ভালো হতো।
আমানত হার না থাকায় কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত সুবিধা নিতে পারে। কনজ্যুমার লোন রেট ১২ শতাংশে নিয়ে গেছে, কিন্তু ইন্ড্রাস্টিয়াল বা শিল্প ঋণ অথবা অন্যান্য ঋণের সুদের হার একই রয়েছে। যাদের শিল্প ঋণ বেশি, তারা আমানত হার ৬ শতাংশের এর নিচে নামিয়ে আনতে পারে। কিন্তু যাদের কনজ্যুমার লোন বেশি, তাদের আমানাতের সুদ ৬ এর বেশিও হতে পারে। তবে আমার দৃষ্টিতে এবারের মনিটরি পলিসি ভালো হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে সময়ে সময়ে তা পর্যালোচনা করা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়েছে, কিন্তু পলিসি রেট দিয়ে লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট হলেও ক্রেডিট গ্রোথে তা প্রভাব রাখবে না। ক্রেডিট গ্রোথে প্রভাব রাখতে হলে লেন্ডিং রেট বাড়াতে হবে, আর সেটিই মূল্যস্ফীতি কমাতে কাজ করতে পারে।
বর্তমানে যে লিকুইডিটি ক্রান্স বা তারল্য সংকট, তাতে রেপো রেট বাড়ানোটা আরও বিপরীত ফলদায়ক হতে পারে। রেপো রেট আগের রেটে রাখা বা অরেকটু কমিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত ছিল বলে মনে হয়, যেহেতু বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে।
এছাড়া, কিছু ব্যাংকের ঋণের অনিয়মের তথ্য উঠে আসায় আমানতকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। তাই এ সময়ে বেশি করে তারল্য সরবরাহ ও ক্রেডিট গ্রোথ (ঋণ প্রবৃদ্ধি) বাড়ানোটা স্বাভাবিক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের টার্গেট ঠিক আছে; তারা ক্রেডিট গ্রোথ কিছুটা বাড়িয়েছে, তবে একই সময়ে রেপো রেট বাড়ানোটা এর সঙ্গে কিছুটা স্ববিরোধী।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ট্রাকশনারি পলিসি বা সংকোচন নীতি গ্রহণ করা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর হবে না বলা যায়। কারণ লেন্ডিং রেট পরিবর্তন হচ্ছে না। রেপো রেট দিয়ে তারল্য সংকটটা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। এর মাধ্যমে বার্তাটি হলো যে, এই মুদ্রানীতি কিছুটা কন্ট্রাকশনারি হলো। রেপো রেটে যে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে, তা নয়। যেটি বাড়ানো হয়েছে, হয়তো এখানে আইএমএফ এর চাপ থাকতে পারে।
মনজুর হোসেন বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক