বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখাতে মার্চে বেসরকারি উদ্যোগে সবচেয়ে বড় বিজনেস সামিট
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরতে মার্চের ১১ তারিখে বেসরকারি উদ্যোগে সবচেয়ে বড় বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ২৮টি দেশের অ্যাম্বাসেডরদেরও ইনভাইট করা হচ্ছে।
সরকারি দুটি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা) এর সহায়তায়ে এ সামিটের আয়োজনে মূল ভুমিকা পালন করছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ইতোমধ্যে অন্তত তিনটি বড় কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি এ সামিটে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এফবিসিসিআই'র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তিন দিনের এ সামিট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) প্রায় ৩০টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বসছে সংগঠনটি। প্রধানমন্ত্রীর এ সামিট উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য জানিয়েছেন, "আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বাইরে আরো যেসব সম্ভাবনাময় পণ্য রয়েছে, সেসব সম্পর্কে আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই।"
"অনেক কোম্পানি রয়েছে, যারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা কিংবা বিনিয়োগ সুবিধা সম্পর্কে জানে না। এমনকি বাংলাদেশ সম্পর্কেও হয়তো সঠিকভাবে জানেন না,"
"বাংলাদেশে নতুন নতুন স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) হচ্ছে। এছাড়া ট্যাক্সসহ বিনিয়োগের আরো বহু সুযোগ রয়েছে বিদেশীদের জন্য। আমরা আশা করছি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইওরা এসব সম্ভাবনা দেখে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়ের বিষয়ে ইতিবাচক উপলব্ধি তৈরি হবে, যার ফলে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়বে," বলেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কমিটির কারিগরি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত ডক্টর এম মাসরুর রিয়াজ টিবিএসকে বলেন, "আমরা আশা করছি, এই সামিট হবে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন। এতে হাইয়েস্ট ইমপ্যাক্টও হবে বলে আশা করছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামর্থ্য এবং কেন ব্যবসায়ের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য – তা তুলে ধরা হবে।"
তিনি জানান, "ইতোমধ্যে এজিয়াটা গ্রুপের ডেপুটি সিইও এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ ফ্রেঞ্চ শিপিং কোম্পানি সিএমএ সিজিএম এর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের সিইও সামিটে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।"
অবশ্য এফবিসিসিআই'র অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সাতটি কোম্পানির সিইও কিংবা তাদের প্রতিনিধি আসার বিষয়ে আয়োজকদের জানিয়েছেন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা মিডিয়া সিএনএন আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিষয়টি প্রমোট করবে বলে জানা গেছে।
এ সামিটে জনপ্রিয় উপস্থাপক, সংবাদদাতা, এবং সিএনএন এর বিজনেস এডিটর-এট-লার্জ রিচার্ড কোয়েস্ট বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানি এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে কথা বলবেন।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একটি ফায়ারসাইড চ্যাটের আয়োজন করবেন।
গত নভেম্বরে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) কর্তৃক প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে ১.০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এফবিসিসিআই সূত্র জানায়, সামিটে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়েও আলোকপাত করা হবে।
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে বিডা'র উদ্যোগে ঢাকায় দুই দিনের বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ওই সামিটে বাংলাদেশ ২.৭ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট প্রোপোজাল পেয়েছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো সৌদি আরব, তুর্কিয়ে, চীন এবং আমেরিকার কোম্পানি। আলোচ্য প্রোপোজালের মধ্যে এককভাবে সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স ১.৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিলো।
অবশ্য প্রোপোজাল আসলেও তেমন বিনিয়োগ আসেনি বলে জানা গেছে। বিশেষত সৌদি ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এখনো শুরু হয়নি।
এফবিসিসিআই'র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই বিনিয়োগ সামিটের ধারাবাহিকতায় এবারের বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকারকে সহায়তার অংশ হিসেবে এ সামিটের আয়োজন করা হচ্ছে এবং এটিই পারফেক্ট মেথড।