আমদানি কমেছে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের, দাম আরো বৃদ্ধির আশংকা
ডলার সংকটের কারণে কমে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় রোজার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন আমদানিকারক এবং ভোক্তারা।
রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ছোলা, ডাল, খেজুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আটার। এসব পণ্যের বেশিরভাগই আমদানি নির্ভর।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রমজানে নিত্যপণ্যের আমদানি কমেছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে গত বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি। যেমন গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিলো প্রায় ৭০ টাকা। এখন কেজিপ্রতি এই পণ্যের দাম ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। রমজানের শুরুতে ছোলার দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। আমদানি কম হওয়ায় খুচরা বাজারে বেড়ে যাবে সব ধরনের পণ্যের দাম।
আমদানিকারকরা বলছেন, আগামী মার্চে শুরু হবে রমজান মাস। এলসি ওপেন করে পণ্য আমদানিতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। খাদ্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি সুবিধা এখনই শিথিল না করলে রোজার আগে বাজার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে না।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আমদানিকারক মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, গত বছরের রমজানের পণ্য আমদানির তুলনায় এবারে আমদানির পরিমাণ কম। বৈশ্বিক বাণিজ্যের মন্দা বিশেষ করে ব্যাংকগুলো এলসি না দেওয়ায় এই সংকট তৈরী হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে চাইলেও ব্যাংক ঋণপত্র সীমিত করায় আমদানি করতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু চাহিদার তুলনায় পণ্য আমদানি কম হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি থাকবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। এক বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানি পরিমাণ ছিলো প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন।
একই সময়ে কমেছে সয়াবিন বীজ আমদানির পরিমাণও। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিন টন। ১ বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছিলো প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন।
নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন। আগের অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছিলো ২ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন।
রোজায় ইফতারির অন্যতম খাদ্যপণ্য ছোলা। গত তিন মাসে ছোলার আমদানিও কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। গত তিন মাসে ছোলা আমদানি হয় প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ের তিনমাসে ছোলা আমদানি হয়েছিলো প্রায় ৯৮ হাজার মেট্রিক টন।
গত তিন মাসে মটর আমদানি হয় প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। ১ বছর আগে তিন মাসে এই পণ্য আমদানি হয়েছিলো ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি।
তবে চিনি আমদানির পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে চিনি আমদানি হয় ৬ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছিলো ৬ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন।
গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয় প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিলো প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর রমজান উপলক্ষে পণ্য আমদানির হিড়িক পড়ে যেতো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে বাজারে সরবরাহের প্রতিযোগিতা থাকতো আমদানিকারকদের। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি তার বিপরীত। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছে না।
বিশেষ করে খেজুর, ছোলা, ডাল, মসুর আমদানি করতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন, এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক থেকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না তারা।