ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ২৮ ধরনের নিত্যপণ্যে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব সিপিডি’র
ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ২৮ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, এই উদ্যোগ নেওয়া হলে বাজারে ভোক্তার ওপর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক- বাজেট আলোচনায় এ মতামত দেয় সিপিডি।
সিপিডির রিসার্চ ফেলো মুনতাসীর কামাল- অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টিসহ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল এবং রাজস্ব অব্যাহতি কমিয়ে আনার (ফেজ আউট) সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা ঠিক করার প্রস্তাব দেন।
এছাড়া, ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বর্তমানের ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে থিঙ্ক ট্যাঙ্কটির পক্ষ থেকে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এতে অর্থনৈতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো তাদের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে।
সভা শেষে মুনতাসীর কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্তমানে ২৮ ধরনের নিত্যপণ্য আমদানিতে আয়কর, আবগারি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলিয়ে ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ধার্য করা হয়। এই হার কিছুটা কমিয়ে আনা হলে এবং কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হলে ভোক্তা পর্যায়ে এর কিছুটা সুফল যেতে পারে।"
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা ধার্য করা হয়েছিল।
মুনতাসীর কামাল বলেন, এই সময়ে কেবল মূল্যস্ফীতি হিসাব করলেও করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করতে হয়।
সরকারের কর ব্যয় ও ছাড় কমানোর বিষয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সরকারকে সময়াবদ্ধ শর্ত ও পরিকল্পনা দিয়েছে।
আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যানও স্বীকার করেন, এক্ষেত্রে পরিকল্পনা থাকা দরকার। এসময় তিনি বলেন, করের কথা বলতে গেলে করযোগ্য প্রভাবশালীরা বিরক্তি প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, বাড়ির মালিকসহ সম্ভাব্য করদাতাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য যে গতিতে কর: জিডিপি অনুপাত বাড়ছে, তার চেয়ে দ্রুত গতিতে তা বাড়াতে হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমিতি (বিইএ) সংরক্ষণমূলক নীতির বিপক্ষে অবস্থান তুলে ধরে। সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, "ধনী দেশের যারা এসব প্রস্তাব দিচ্ছেন, তারা সব ধরনের সংরক্ষণমূলক নীতি অবলম্বন করেই ধনী হয়েছেন। তবে ধনী হওয়ার পর 'উপরে ওঠার মই লাথি মেরে সরিয়ে মুক্তবাজারে আমাদের খেলতে বলছেন, যা দ্বিচারিতা।"
এসময় প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স, স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানি, এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-সহ অর্থনীতি সংক্রান্ত আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন।