ইডিএফের আকার কমিয়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার করা হলো, ঋণ পরিশোধে বিলম্বে ‘পেনাল্টি ইন্টারেস্ট’
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলোকে ৪ শতাংশ হারে 'পেনাল ইন্টারেস্ট' দিতে হবে। রোববার জারি করা এক সার্কুলারে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, ব্যাস কয়েকটি ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে ইডিএফ থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধে বিলম্ব করছে বলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত ১৯ মার্চের তথ্য অনুযায়ী, ইডিএফএর ঋণের বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে।
রিজার্ভের উপর চাম কমাতে ইডিএফ থেকে নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে আগের ঋণ আদায়ে বেশি জোরদার দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত আড়াই মাসে ইডিএফএ তহবিল থেকে ঋণের বকেয়া ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে ইডিএফএর আকার ছিল ৭ বিলিয়নের বেশি। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের দিকে ইডিএফএর আকার এক বিলিয়ন কমে ৬ বিলিয়নে ডলারে দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফএর পরামর্শের সাথে সংগতি রেখে নিয়মিত ইডিএফএর আকার কমানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইডিএফের অধীনে কাঁচামাল আমদানির জন্য রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রা সহায়তা প্রদান করে। একটি ইডিএফের ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে এই মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানো যাবে। এর পরেও অনেক ব্যাংক যথাসময়ে ইডিএফএর অর্থ পরিশোধ করতে না পাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পেনাল ইন্টারেস্ট পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছে।
শিল্পসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ইডিএফ ঋণের সুদের হার আগে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট (লাইবর) অনুসারে নির্ধারিত হয়েছিল। কোভিডজনিত অর্থনৈতিক মন্দার শুরুর আগপর্যন্ত, ইডিএফ ঋণের সুদের হার ৬ মাসের গড় লাইবরের সঙ্গে ১.৫ শতাংশ যোগ করে ঠিক করা হতো।
তবে করোনা মহামারির মধ্যে তহবিলের ব্যয় কমাতে প্রথম পর্যায়ে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ শতাংশ। পরে গত ২০ জুলাই সুদের হার বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে ৪.৫ শতাংশ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইডিএফের আকার আরও ২-৩ বিলিয়ন ডলার কমানো হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ দিয়ে গঠিত ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণদান পর্যায়ক্রমে বন্ধের যে পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এ উদ্যোগ তারই অংশ।
৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা সফরকারী আইএমএফের প্রতিনিধিদলও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিদ্যমান ইডিএফ ঋণ বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব করার পরামর্শ দিয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র।
এনভিন্স টেক্সটাইলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'ইডিএফ ছিল আমাদের দেশের রপ্তানির বাড়াতে সহায়ক মাধ্যম। এর মাধ্যমে গ্রাহক স্বল্প সুদে ফান্ড নিতে পারত। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিচ্ছে, তার ফলে গ্রাহক এর থেকে নিরুৎসাহিত হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই ফান্ডের সুদহার চড়া হয়ে গেলে প্রডাক্ট কস্টও চড়া হয়ে যাবে। তখন বিক্রয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়বে। আইএমএফের পরামর্শের কারণে সরকার কিছুটা চাপে আছে, সেটাও সত্য। তবে এটা সময় নিয়ে করা উচিত ছিল। অন্তত ১ বছর সময় নিলে সবাই এটাকে গুছিয়ে আনার সুযোগ পেত।'
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, 'ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজগুলো কিছু বড় সমস্যায় পড়বে। কারণ তাদের তুলাটা অ্যাডভান্স আনতে হয়। আবার টেক্সটাইল মিলস প্রতিষ্ঠানগুলো ইডিএফের ফান্ড নিয়ে সুতা আমদানি করে। বর্তমানে তাদের অর্ডার কম রয়েছে। এর মধ্যে যদি আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়, তাহলে তারা বড় সমস্যার মুখোমুখি হবে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইডিএফের আকার কমিয়েছে, কিন্তু ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সহায়তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় মুদ্রায় একটি ইডিএফ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই অংশ হিসাবে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে একাধিক রপ্তানিকারক জানান, স্থানীয় মুদ্রায় তহবিল দিলেও সমস্যা থেকে যায়। কারণ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি করতে এক ডলারের জন্য ১১০ টাকার বেশি দিতে হয়, কিন্তু রপ্তানি করার সময় ডলারের দাম কম পান।
বর্তমানে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১.২৮ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র অনুসারে, বৈদেশিক মুদ্রাজ রিজার্ভের প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার হবে।