রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল আরো ২০০ মিলিয়ন ডলার কমানো হয়েছে
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) এর আকার আরো ২০০ মিলিয়ন ডলার কমিয়ে ৫.২ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এনিয়ে পাঁচ মাসের ব্যবধানে ৭ বিলিয়ন থেকে কমিয়ে ৫ বিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে তহবিলের আকার। গত বছরের ডিসেম্বরে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়ন থেকে কমিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। পরে ধীরে ধীরে সেটি কমিয়ে ৫.২ বিলিয়নে নিয়ে আসা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে ইডিএফ- এর আকার কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার শর্ত হিসেবে, চলতি বছরের জুন নাগাদ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নেট রিজার্ভকে ২৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় আগের তুলনায় অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদিকে, রপ্তানিতে সেভাবে প্রবৃদ্ধি নেই। এক্ষেত্রে ইডিএফ ঋণের পরিসর কমানো ছাড়া নেট রিজার্ভ বাড়ানোর অন্য উপায় সীমিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের পরিসর আরো কমিয়ে নিয়ে আসা হবে মন্তব্য করে তারা বলেন, জুনে এটা আরো কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-র চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আরএফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, ইডিএফের সাম্প্রতিক আকার কমানোর তেমন প্রভাব পড়বে না ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যে। আগের মাসগুলোর চেয়্যে ব্যাংকগুলোতে তারল্য পরিস্থিতি ভালো অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, জুলাইয়ে পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো একাউন্টে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে।
ইডিএফের ওপর চাপ কমাতে এই তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদহার বৃদ্ধি, একক গ্রাহকের ঋণসীমা কমিয়ে আনা এবং রপ্তানি আয় দেশে না আনলে নতুন করে ঋণ না দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া, আগে সর্বোচ্চ ২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া গেলেও, এখন তা কমিয়ে সর্বোচ্চ ২০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। ঋণের সুদহার ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৪.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, তারা ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, বর্তমানে ঋণগ্রহীতারা পরিশোধের জন্য ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সময় পান। পরিশোধিত অর্থের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রিজার্ভে যোগ হয় বলেও জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নীতি অনুসারে, যেসব রপ্তানিকারক ইডিএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পর দেশে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন করছেন না, তারা এ তহবিল থেকে নতুন ঋণ পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
আইএমএফের শর্ত অনুসারে, ইডিএফের মতোন বিশেষ তহবিলগুলোকে বাদ রেখেই দেশের প্রকৃত মুদ্রা রিজার্ভের হিসাব করতে হবে।
তাই আগামী জুলাই থেকে গ্রস ও নেট দুই পদ্ধতিতেই রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে দেশে গ্রস রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার। আর নেট রিজার্ভ হলো ২০ বিলিয়ন ডলার।