জ্বালানি থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হলে করহারও কমিয়ে আনার দাবি ব্যবসায়ীদের
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে এ খাতের ট্যাক্সও কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, যাতে বিদ্যুতের দাম সহনীয় থাকে।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক প্রাক বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা এ দাবি তোলেন।
এমন দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীও।
কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইমরান করিম এ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, "আগামী দুই তিন বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি থেকে সব ধরনের ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে। ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পাশাপাশি ট্যাক্স রেট হালনাগাদ (কমানো) হওয়া জরুরি।"
বর্তমানে বিদ্যুৎ খাত থেকে বছরে এনবিআর ২৫০০০ থেকে ২৭০০০ কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় করে। ভর্তুকিও প্রায় একই পরিমাণ দেওয়া হয়।
"আপনারা যদি ভর্তুকি সরিয়ে দেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে যাবে। আবার ট্যাক্সেশনের দাবি যদি একই থেকে যায়, তাহলে ডাবল দাবি হয়ে যায়। তা যৌক্তিক হতে পারে না," বলেন তিনি।
তিনি সব ধরনের জ্বালানির উপর এই হার ২২ শতাংশ রাখার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, "এর ফলে সরকারের ট্যাক্সের তেমন ক্ষতি হবে না এবং ফরেন কারেন্সি আউটফ্লো বেশি হবে না।"
তিনি আরো বলেন, "স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর ট্যাক্স আছে। আবার আমদানি করা বিদ্যুতে নেই। তাহলে নিজের দেশে ব্যবসা করে কি অপরাধ করলাম?"
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, "বিদ্যুতের মূল কাঁচামাল জ্বালানির উপর ডিউটি আপ টু ৪৮% থাকায় আমরা সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। যা সাবসিডি দেওয়া হয়, সেটাই ট্যাক্স নেওয়া হয়। আমাদের ব্রিদিং স্পেস দরকার। আমরা আশা করবো, জ্বালানি উপর ট্যাক্স থাকবে না।"
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, "সাবসিডি যদি না থাকে তাহলে ট্যাক্স নেওয়ার দরকার কী? ব্যবসায়ীদের এটি ভালো প্রস্তাব।"
জ্বালানি আমদানির পর প্রতি লেয়ারে টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স) ৭ থেকে ১০% আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইমরান করিম বলেন, "এই হারে ট্যাক্স হলে নিট প্রফিট হতে হবে ৩০ থেকে ৪০%। দেশে এমন কোন ব্যবসা আছে নাকি যেখানে ৩০ থেকে ৪০% প্রফিট হয়?"
এছাড়া আদায় করা ট্যাক্স রিবেট না পাওযায় বিদ্যুতের খরচ বর্তমানে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
সরকার আগামী জুনে পরবর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে প্রাক বাজেট আলোচনার আয়োজন করে।
আলোচনায় ব্যবসায়ীরা কোভিড পরবর্তীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য চাপে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ব্যাংক ধসে পড়ার বিষয়টিও তাদের মধ্যে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
এসময় তারা বলেন, অর্থনীতির পরিধি কমে আসছে। এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) অলমোস্ট বন্ধ। কেউ তাদের ইন্ডাস্ট্রি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি ক্যাপাসিটিতে চালাতে পারছেন না।
এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ একজন বিনিয়োগকারীর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, "ধরুন একজন বিনিয়োগকারী এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছেন, ২৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি ২৫০ কোটি টাকা করে ব্যাংক ইন্টারেস্ট দিচ্ছেন। তার যদি গ্যাসের সাপ্লাই না থাকে, তার অবস্থাটা কী হয়?"
আলোচনায় নেই এনবিআর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ প্রকাশ
বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনায় ট্যাক্স-ভ্যাট পলিসি সংশ্লিষ্ট। অথচ আলোচনায় এনবিআরের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় ব্যবসায়ী নেতারা এনবিআরের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, "এনবিআরের কেউ এখানে (আলোচনায়) নেই। উনারা নিজেদের কী ভাবছেন? প্রজাতন্ত্রের উচ্চ কর্মকর্তা হন, আর যাই হন - তারা দেশের সেবা করার জন্যই আছেন।"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "তিনি এফবিসিসিআইতে যেতেন, আমাদের কথা শুনতেন।"
তিনি বলেন, "বিজনেস কমিউনিটিকে শুনতে হবে। আমাদের সবারই ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কিন্তু ওই বিতর্কের মাধ্যমেই আমরা কমন গ্রাউন্ড খোঁজার চেষ্টা করবো, যেটা দেশের স্বার্থে হওয়া উচিত।"
এ সময় তিনি বলেন, "কেউ কেউ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে এসে আধিপত্য জাহির করেন। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) যে জায়গায় দেশের সেবা করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন, তাদেরও নিজেদেরকে সে হিসেবে বদলানো উচিত।"
তিনি এনবিআরের লিডারশিপ নিজেদের মধ্য থেকে আনার দাবি জানিয়ে বলেন, "এনবিআরের যেসব অফিসার, তাদের এনাফ ক্যাপাবিলিটি আছে। তাদের মধ্য থেকে কেন লিডারশিপ তৈরি হবে না। কেন বাইরে থেকে (এডমিন ক্যাডার) আরেকজনকে যেতে হবে।"
তিনি মনে করেন, ট্যারিফ সংক্রান্ত কার্যক্রম ট্যারিফ কমিশনের হাতে থাকা উচিত আর তা এক্সিকিউট করবে এনবিআর।
এ কে আজাদ বলেন, "আগে আলোচনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত থাকতেন, নোট নিতেন। কিন্তু আজকের আলোচনায় মন্ত্রী নেই, এনবিআর চেয়ারম্যান নেই, একজন প্রতিনিধিও নেই। এর মানে কী?"