ইউএফএস কেলেঙ্কারির পর সম্পদ ব্যবস্থাপকদের কার্যক্রম নিরীক্ষণে আইসিবি’র টাস্কফোর্স গঠন
ভুয়া বিনিয়োগ ও কাগজপত্র জাল করে মিথ্যা এফডিআর দেখালেও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়ালস সলিউশনস (ইউএফএস) -এর 'কারচুপি' ধরতে পারেনি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ইউএফএস পরিচালিত চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি ও হেফাজতকারীর দায়িত্বে ছিল সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি, যার জন্য নিয়মিত ফিও পেয়েছে তারা।
চারটি ফান্ডের প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের পর এবার সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে আইসিবি।
আইসিবি বলছে, নিজেরা আরও সতর্ক হওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, আর যেন না ঘটে বা যদি কোনো অনিয়ম থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে বলে জানায় তারা।
এই চারটি ফান্ডসহ মোট ৬১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি আইসিবি।
৬ সদস্যবিশিষ্ট এই টাস্কফোর্স সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন রিভিউ বা পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
তবে ইউএফএস এর টাকা আত্মসাতের ক্ষেত্রে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে আইসিবি।
যার জন্য আত্মসাৎ হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারে বিশেষ নিরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এছাড়াও ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান বিভাগে তৎকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ওপর কেন শাস্তি আরোপ করা হবে না, এ মর্মে নোটিশ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন টিবিএসকে বলেন, "ফান্ডের টাকা আত্মসাতের ঘটনার পর ইউএফএস- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীর টাকা উদ্ধারের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।"
তিনি বলেন, "পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফান্ডের টাকা উদ্ধারসহ ইতোমধ্যে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইসিবিকেও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু পাইনি আমরা।"
তিনি বলেন, "আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা কেউ চায় না। টাকা উদ্ধারের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।"
টাস্কফোর্স যা করবে
আইসিবি গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যপরিধির শুরুতেই বলা হয়েছে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিওভুক্ত সিকিউরিটিজসমূহ অর্থাৎ মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট ইন্সট্রুমেন্ট ব্যাংক ডিপোজিট, এফডিআর, বিনিয়োগের কাগজপত্র যথাযথ যাচাই-বাছাই করা হবে।
এক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্টসমূহ সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে যাচাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
টাস্কফোর্স মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ তথ্যের যথার্থতা যাচাই করবে। অতিমূল্যায়িত অ্যাসেট, খারাপ বিনিয়োগ, অস্তিত্বহীন বা নন-পারফর্মিং বিনিয়োগকে ভালো বিনিয়োগ বলা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখবে টাস্কফোর্স।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিওভুক্ত সিকিউরিটিজসমূহ কাস্টডিয়ানের নিকট সংরক্ষিত আছে কিনা তা যাচাই করা, তা যথার্থ কিনা তা নিশ্চিত করা এবং ফান্ডের কোনো আর্থিক বিবরণীতে ভুল আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে টাস্কফোর্স।
ফান্ডসমূহের সম্পদ ব্যবস্থাপকদের আর্থিক প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণের পর অসংগতি পেলে তার চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার নির্দেশনা দিয়েছে আইসিবি।
এইক্ষেত্রে অসংগতি ঠিক করতে সম্পদ ব্যবস্থাপককে চিঠি প্রদান, বিশেষ নিরীক্ষার পাশাপাশি ফান্ডে অস্তিত্বহীন, নন-পারফর্মিং ও নন-ফাংশনিং সম্পদ থাকলে তা একটা আলাদা কলামে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।