বাংলাদেশে আসা তুলার ফিউমিগেশন বাতিলকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র
গত ১৬ মে থেকে কার্যকর হওয়া আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা বাংলাদেশের বন্দরে ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার প্রক্রিয়া ছাড়াই ছাড় করা যাবে। এতে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের শত শত কোটি টাকা ব্যয়-সাশ্রয় হওয়ার পাশপাশি পাঁচ দিন অপেক্ষার অবসান হবে।
২০২২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি কারিগরি প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফরের ধারাবাহিকতায় এই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সরেজমিনে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন ও তাদের কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা কৌশল যাচাই করে দেখে। ওই সময় তারা তুলা প্রক্রিয়াকরণে যেসব কৌশল অনুসরণ করে—জিনিং বা তুলা থেকে বীজ ও ময়লা পরিস্কার করা, লিন্ট ক্লিনিং বা পাতা, ঘাস বা অন্যান্য উপাদান সরিয়ে ফেলা, তুলার বেল তৈরির সময় কঠোরভাবে চাপানো—তা দেখে আশ্বস্ত হয় যে আমেরিকা থেকে আমদানি করা তুলায় বোল উইভিল বা তুলার ভোমরা পোকা থাকার কোনো উপায় বা সম্ভাবনা নেই।
সোমবার (২২ মে) বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা আমদানিকারক এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলার সপ্তম বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, যার আর্থিক মূল্য ২০২২ সালে ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার প্রক্রিয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় একদিকে আমদানিকারকের কাছে তুলা পৌঁছাতে দেরি হতো, অন্যদিকে বাংলাদেশি আমদানীকারকদের প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা এই বাবদ খরচ করতে হতো।
আমেরিকা থেকে আমদানি করা উচ্চমানের ও টেকসই তুলার ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার প্রক্রিয়ার প্রথা বাতিল করায় এখন আমেরিকান তুলা সরাসরি ও সহজেই বাংলাদেশী আমদানীকারকদের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পের সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারবে। ফলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাতের উল্লেখযোগ্য সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, 'যৌথভাবে কাজ করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারা এবং একসাথে কাজ করার মাধ্যমে সমৃদ্ধি বাড়ানো ও বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করার একটি বড় উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।'
তিনি আরও বলেন, 'আমেরিকান ভোক্তারা যেহেতু বাংলাদেশে উৎপাদিত টেকসই, উচ্চমানের পোশাকের ওপর নির্ভর করে, তাই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে উচ্চমানের আমেরিকান তুলার প্রয়োজন রয়েছে।'
বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, 'বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় জলবায়ু সংকট মোকাবেলা, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিকাশ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।'
গত ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমেরিকার তুলা শিল্পের সহযোগিতায় আমদানি করা তুলার ফিউমিগেশনের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা বাতিলের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এর আগে গত ৮ মে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে তুলার ডাবল ফিউমিগেশন উঠিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চাইছে।
কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের তুলার ডাবল ফিউমিগেশন প্রত্যাহার করার এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চাওয়ার পরিকল্পনা করছিল।
প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দরে দ্বিতীয়বার ফিউমিগেশন না করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি এবং বিশেষ করে তুলা থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র বাইরের দেশে তুলা পাঠানোর আগে ফিউমিগেশন করালেও, বাংলাদেশের আইনে বন্দরে আমদানি করা তুলা আবার পতঙ্গমুক্ত করতে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, এটি 'অপ্রয়োজনীয়' এবং তাদের উৎপাদন খরচ 'বাড়ায়'। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে এটি বাতিল করার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছিল।