আমানতের গড় সুদহার ২৫ মাসের মধ্যে এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৪.৩৮%
তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো আমনত সংগ্রহে (ডিপোজিট কালেকশন) মরিয়া হয়ে ওঠায় দেশের ব্যাংকিং খাতের ডিপোজিটের ওয়েইটেড এভারেজ ইন্টারেস্ট রেট (গড় হার) গত ২৫ মাসের মধ্যে এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৪.৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
এর আগে, ২০২১ সালের মার্চে এই রেট ছিল ৪.৪০ শতাংশ। এরপর থেকে ডিপোজিটের রেট এতো বাড়েনি।
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বল কিছু ব্যাংক বেশি সুদহারে আমানত সংগ্রহ করায় ডিপোজিটের ওয়েইটেড এভারেজ ইন্টারেস্ট রেট বেড়েছে।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী টিবিএসকে বলেন, "ভালো ব্যাংকগুলোর লিকুইডিটি সিচুয়েশন ভালো। তবে কিছু ব্যাংক আছে যাদের লিকুইডিটি স্ট্রেস আছে। অন্য ব্যাংকগুলো ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট খুব বেশি না বাড়ালেও স্ট্রেসে থাকা ব্যাংকগুলো ডিপোজিট কালেকশন করতে অনেক বেশি সুদ অফার করছে গ্রাহকদের। এটিই ব্যাংক খাতে ওভারঅল ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়ে দিয়েছে।"
দেশে কর্যরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মোট ৭টি ব্যাংক ৬ শতাংশের ওপরে সুদহারে আমানত সংগ্রহ করছে। এরমধ্যে দুর্বলের তালিকায় প্রথমদিকে থাকা পদ্মা ব্যাংক আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ৭.৮৬ শতাংশ সুদ দিচ্ছে, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইউনিয়ন ব্যাংক দিচ্ছে ৬.৭৮ শতাংশ এবং এরপরে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করছে ৬.৬৩ শতাংশ সুদে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর নিট ইন্টারেস্ট ইনকাম মার্চের তুলনায় ৫ বেসিস পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২.৯২ শতাংশ। ২০২০ সালের অগাস্টে এরচেয়ে কম ২.৮৭ শতাংশ ইন্টারেস্ট ইনকাম দেখেছিল ব্যাংক খাত।
৩২ মাসের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন হার, এর আগে ২০২০ সালের আগস্টে সর্বনিম্ন হার হয়েছিল ২.৮৭ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশে নেট ইন্টারেস্ট ইনকামের স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয় ৩ শতাংশ। টানা ৬ মাস ধরে দেশের ব্যাংক খাতের ইন্টারেস্ট ইনকাম ৩ শতাংশের নিচে আছে। সাধারণত ব্যাংকের অপারেটিং কস্ট ২ শতাংশ হয়। বাকি ১ শতাংশ দিয়ে ব্যাংকের প্রভিশনিং, ক্যাপিটালসহ বাকি খরচ নির্বাহ করতে হয়। নেট ইন্টারেস্ট ইনকাম কম হলে সেটি ফরেন ট্রেডেও প্রভাব ফেলে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হুসেন টিবিএসকে বলেন, "নন পার্ফরমিং লোন (খেলাপি ঋণ) বাড়ার কারণে রিটার্ন অন অ্যাসেটস (আরওএ) কমে যাচ্ছে। এটি লোনের ইন্টারেস্ট কমার অন্যতম কারণ। এছাড়া, লোনের ইন্টারেস্ট রেটে ৯ শতাংশ ক্যাপ থাকার কারণে ব্যাংকগুলো বেশি সুদ চার্জ করতে পারছে না। অন্যদিকে, ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট ক্রমাগত বাড়ছে। এসব বিষয়ই ব্যাংকের নেট ইন্টারেস্ট ইনকামে প্রভাব ফেলেছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে অর্থ ঋণ আদালতে ১,৬৬,৮৮৬ কোটি টাকার ৭২,১৮৯টি মামলা বিচারাধীন ছিল। আগের বছরের তুলনায় ওই বছর মামলার সংখ্যা ৩,৯১৮টি বেড়েছে এবং দাবিকৃত অর্থের পরিমাণও বেড়েছে ২৩,১৯২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, গত এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় ঋণের সুদহার ২ বেসিস পয়েন্ট কমেছে।
এদিকে, ব্যাংকের এক্সেস লিকুইডিটিকেও ঋণের সুদহার কমানোয় ভূমিকা দেখছেন মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, "ব্যাংক খাতে এখন ১.৩৫ লাখ কোটি টাকার এক্সেস লিকুইডিটি আছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে লোনের ইন্টারেস্ট রেট মার্চের তুলনায় কমেছে। এটিই মূলত ব্যাংকগুলোর নেট ইন্টারেস্ট ইনকাম কমাতে ভূমিকা রেখেছে।"