কঠিন জেনেও আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা
চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের ঘরে চলে এলেও আগামী অর্থবছরের সার্বিক রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের উপর ধরে লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই লক্ষ্যমাত্রা 'অবাস্তব' (আনরিয়েলিস্টিক) এবং বছর শেষে যথারীতি বড় ব্যবধান ঘাটতি থাকবে।
গত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সহ সার্বিক রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী বছরের জন্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, "এই টার্গেট রিয়েলিস্টিক নয়, বিশাল শর্টফল থাকবে আগামী বছরও।"
তিনি বলেন, "জিডিপিতে ট্যাক্সের অবদান (ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও) আগামী বছর না বেড়ে আরো কমে যাবে।"
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দশমাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৭ শতাংশ। অথচ এর আগের অর্থবছরগুলোতে এই হার ছিলো গড়ে ১৪ শতাংশের মতো।
শুধু তাই নয়, সর্বশেষ এপ্রিলে রাজস্ব আদায়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশের বেশি।
তা সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছর ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
পিআরআই সম্প্রতি এক হিসাব করে দেখিয়েছে, এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অন্তত ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে।
সেই হিসেবে আগামী বছরে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াবে প্রায় ৩৬ শতাংশ।
এত বেশি লক্ষ্যমাত্রার কারণ হিসেবে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, "যেহেতু বড় ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, সেজন্য এনবিআর পারুক বা না পারুক তাদের উপর বিশাল আয়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়।"
"অথচ এনবিআরের সে সক্ষমতা তৈরি হয়নি। কেন তৈরি হয়নি, তার জন্য এনবিআরকেও দায়ী করা যায় না। তার লোকবল নেই, রাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়ায় না– ফলে কাঙ্খিত রাজস্ব আসছে না", যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে বেশকিছু শর্ত দেয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো আগামী অর্থবছরে জিডিপিতে করের অবদান ০.৫ শতাংশ বাড়ানো।