সবার আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চান ব্যবসায়ীরা
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট থেকে ব্যবসাবাণিজ্যের যে প্রত্যাশাগুলো ছিল তার কতোটা পূরণ হলো, এবং তাদের এগিয়ে যেতে আর কি কি দরকার- সেবিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তারা বলেছেন, এই সংকটের সময়ে শিল্পোৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রেখে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং এশীয় দেশগুলোয় আসতে ইচ্ছুক বিদেশি কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনে যোগাযোগের খাতের বরাদ্দ থেকে কিছুটা কাটছাঁট করে হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন – বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য অতি-জরুরি এবিষয়ে আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে। শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর এফবিসিসিআই বোর্ড রুমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এসময় সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, "গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার চাইলে যোগাযোগ খাতের কিছু বরাদ্দ কমাতে পারে।" কিন্তু, সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই তাতে ব্যাঘাত ঘটায় পর পর লোডশেডিং।
শনিবার (৩ জুন) অন্যান্য শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়াতেও প্রাধান্য পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রসঙ্গ।
এফবিসিসিআই
জসিম উদ্দিন বলেন, "দেশে যখন গ্যাস–বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো ছিল, তখন বিনিয়োগ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আমাদের গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাত বর্তমানে অনেকটা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তাহলেই শিল্পায়ন হবে। নতুন কর্মসংস্থান হবে।"
সংবাদ সম্মেলন চলাকালে লোডশেডিং হয়, এসময় জেনারেটর চালু না হওয়ায় প্রায় ২০ মিনিট বিদ্যুৎহীন ছিল এফবিসিসিআই বোর্ড রুম। এ সময় জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "ব্যবসায়ীদের কাছে অন্ধকার বেশি ব্যয়বহুল। কারণ এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে। দাম যতই হোক, বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।"
গ্যাসের জোগান বাড়াতে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার বলে মন্তব্য করেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, "এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পর তারা এলএনজি সরবরাহ করতে চাইছিল না। তার মানে টাকা থাকলেই সব সময় জ্বালানি পাওয়ার নিশ্চয়তা কিন্তু নেই"।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, 'আমাদের দেশে কয়লা থাকলেও উত্তোলন করা হচ্ছে না। এখন অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে দুনিয়াতে। ঘরবাড়ির ক্ষতি না করেই তার নিচ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।"
এ ব্যবসায়ী নেতা উল্লেখ করেন যে, এ দেশে বিনিয়োগ করতে চান জাপান ও সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা। চীনও তাদের ব্যবসা অন্য দেশে সরাতে চায়। তাই গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জ্বালানি তেল আমদানিতে ভ্যাট ও আগাম কর প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে, এতে জ্বালানি তেলের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এতে শিল্পখাত-সহ সবাই লাভবান হবে। যত দ্রুত সম্ভব খুচরা পর্যায়ে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা দরকার।
সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে শিল্পোৎপাদন স্বাভাবিক রাখার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, "উৎপাদন সচল রাখতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক বরাদ্দে কিছু সংস্কার ও তার বাস্তবায়ন দরকার।
সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিতে শিল্প উৎপাদন সচল রাখতে হবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কিছু সংস্কারের মাধ্যমে আর্থিক বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও কৌশলী হতে হবে।
দেশের কয়লা সম্পদের ব্যবহার প্রসঙ্গে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দেশ ও দশের কল্যাণেই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে।
গ্যাস সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের বিশাল সমুদ্র সীমা রয়েছে, গভীর সাগরে আমাদের গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে। এরমধ্যেই মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তিকে উৎসাহ দিতে সোলার প্রযুক্তির কাঁচামাল শুল্ক-মুক্তভাবে আমদানির অনুমতি দেওয়া সরকারের উচিত।"
প্রস্তাবিত বাজেটকে 'উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী' আখ্যা দিয়ে শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
বাজেট বাস্তবায়নে ৮টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে এফবিসিসিআই। এগুলো হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়ম হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ এবং জ্বালানি, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।
জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের আকার অবাস্তব নয়। অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতি বছর বাড়ছে।
করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তিদেরও ন্যূনতম ২,০০০ টাকা করের আওতায় আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬ কোটি মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে, ৩ কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। তাহলে ২ হাজার টাকা কর দিতে সমস্যা কোথায়? "সবাই উন্নয়ন চায়, সেবা চায়, কর না দিলে সরকার সেবা দেবে কীভাবে।" করজাল বাড়াতে প্রয়োজনে 'কর শুমারি' করার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআরের সক্ষমতা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন মন্তব্য করে জসিম উদ্দিন বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপন করতে হবে। কারণ এখন উপজেলা পর্যায়ে করযোগ্য অনেক মানুষ বাস করে।
"দেশের মাত্র ২৮ লাখ (প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৩২ লাখ) করদাতা রিটার্ন জমা দেয়। এটা কীভাবে সম্ভব?"- প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আরো রাজস্ব আদায়ে এনবিআরকে অটোমেশন, ডিজিটাইজেশনে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, একইসঙ্গে নীতি বিভাগ ও বাস্তবায়ন বিভাগকে আলাদা করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। "এই কর ফেরতও পাওয়া যায় না, সমন্বয়ও করা যায় না। যে কর ফেরত দেওয়া হবে, সেটা নেওয়া দরকার কী? ট্যাক্স একবার নিলে সেটা ফেরত পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য"।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ না নিয়ে স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নিতে পারে। বর্তমানে বর্তমানে ৮২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি ঋণ প্রবাহে চাপ পড়তে পারে। কারণ ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতকে ঋণ দেওয়ার চেয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করে।
নতুন আয়কর আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এ আইনের বিষয়ে মতামত দিতে ১৭ বার মিটিং করেছি। আইন বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। তা নাহলে ভ্যাট আইনের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।"
এমসিসিআই
প্রস্তাবিত বাজেটের কর ব্যবস্থা নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)- এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কামরান টি. রহমান।
শনিবার রাজধানীতে এমসিসিআই ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান – পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, "আমদানি করা পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে, আমাদের এ আশঙ্কা রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না প্রকৃত প্রভাব শুধু তথ্যউপাত্তে সীমিত থাকে না। এর প্রভাব পড়ে দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রায়।"
টার্নওভারে ন্যূনতম কর এবং উৎস কর কর্তনের (টিডিএস) কোনো কার্যকর হার না থাকায় এমসিসিআই হতাশা প্রকাশ করেছে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির মতে, "কর হার কমানো সত্ত্বেও, এনবিআরের অনুমোদনের বাইরে থাকা এবং প্রস্তাবিত টিডিএস – উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবসার খরচ উচ্চই রয়ে গেছে। আর্থিক বিবৃতি অনুসারে, এটা ন্যূনতম আয়কর এবং ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর কর হারে প্রভাব ফেলে। তাই সঠিকভাবে নথিভুক্ত সব রকমের প্রকৃত খরচ সম্পূর্ণ অনুমোদিত হওয়া উচিত। এই বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করতে হবে বা নাহলে বাদ দিতে হবে।"
এমসিসিআই বলেছে, "ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও স্থাবর সম্পত্তির ওপর করহার বাড়ানো হলে তাতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।" তাই করহার না বাড়িয়ে এলাকাভেদে মূল্য নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজেটে প্রস্তাবিত ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে বলেই মনে করছে ব্যবসায়ী সংগঠনটি।
টিআইএন থাকলে ২ হাজার টাকার কর প্রদানের যে প্রস্তাব বাজেটে দেওয়া হয়েছে তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এমসিসিআই জানিয়েছে, "এতে অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।"
এমসিসিআই সাবেক সভাপতি এবং অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বলেন, "আগাম কর হয় ফেরত দিতে হবে; নাহলে তা পরবর্তীতে সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর বাংলাদেশে লভ্যাংশের উপরে দুই তিন বার কর দিতে হয়ে সেটা বন্ধ করতে হবে।"
যদিও আলোচনা সভার প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। "এতে ভ্যাটসহ সরকারের আয় বাড়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।"
তবে প্রথমে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা করদাতা এবং কর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিদ্যমান অনাস্থা দূর করে একটি উন্নত কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেন।
হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, "এনবিআর যদি করদাতাদের গ্রাহক মনে করে, তাহলেই অনেক সমস্যা সমাধানের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু, তাদের উপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার কারণে সেটা হওয়া অনেকটাই অসম্ভব। "কলোনিয়াল ধ্যান-ধারণার গভর্নেন্সে এটা সম্ভব না। উভয়পক্ষের চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন দরকার।"
আইবিএফবি
সংকটে নিমজ্জিত অর্থনীতি উদ্ধারের দাবিকে পাশ কাটিয়ে তৈরি করা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিগত দেড় দশকের উন্নয়ন অভিযাত্রার সাফল্যের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্লোগান আছে। কিন্তু, নির্বাচনের বছরে মূল্যস্ফীতি কমানো, রাজস্ব বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন, ব্যয় কমানো ও সুশানের উন্নতির মতো বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না রেখেই বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বাজেটের আকার, বরাদ্দ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণও কঠিন বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। এমনকী সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা মুডিসের বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর বিষয়েও বাজেটে কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করে আইবিএফবি।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে রেলপথে মালামাল পরিবহন বাড়াতে দ্রুত ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শও দেওয়া হয়। এছাড়া, আগে যেসব সুবিধা শুধু তৈরি তৈরি পোশাক খাতই পেত, তা রপ্তানিমুখী সব শিল্পকে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়।
শনিবারের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আইবিএফবির সভাপতি এবং এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন- এর মহাব্যবস্থাপক হুমায়ুন রশিদ বলেন, অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় বাজেটে ৪ হাজার কোটি টাকা আলাদা বরাদ্দ রাখা, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ – আগামী বাজেটের ভালো দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কর প্রশাসনের জটিলতার কারণে সকল টিআইএনধারীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২,০০০ টাকা কর রিটার্নের সিদ্ধান্ত কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনবে না বলেও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছে সংগঠনটি।
এছাড়া, যখন অর্থনীতি ও সমাজ ভার্চুয়াল সংযোগের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল, সেসময় মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর কর বাড়ানো সুচিন্তিত পদক্ষেপ নয় বলেও মতপ্রকাশ করেছে।
আইবিএফবি আরো জানায়, বাজেটে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী প্রস্তুতির বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা করা হয়নি। বহুল আলোচিত ব্যাংক কমিশন গঠনসহ ব্যাংকিং খাতের সংস্কার এবং চীনসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশ থেকে জাপানি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার কোনো উদ্যোগও উল্লেখ করা হয়নি।
বাজেটের অগ্রগতি প্রতি প্রান্তিকে মূল্যায়নের জন্য একটি উচ্চ-সক্ষমতার পরামর্শক কমিটি গঠনের পরামর্শও দিয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নে এই কমিটি পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটিকে সহায়তা দেবে।
বিসিআই
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) বলেছে, ছোট, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ৪৫ শতাংশ ইতোমধ্যে করোনা মহামারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ঝরে পড়েছে। কিন্তু, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনও দিকনির্দেশনা নেই বাজেটে।
আমাদের এখন স্থানীয় শিল্প, আমদানি বিকল্প শিল্পের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং টেকসই করা ও কর্মসংস্থান ধরে রাখার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু, টিকে থাকার জন্য লড়াই করা শিল্পকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর দিকে বাজেটে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলে এক বিবৃতিতে জানান বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।
তিনি মনে করেন, শুধু আইএমএফের শর্তের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
উচ্চমূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায়, ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং আগামী ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয় বিসিআই।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, সরকারের আয় মূলত বেসরকারি খাত ও রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে হয়। তাই বিসিআই মনে করে, বেসরকারি খাতে জ্বালানি স্বল্পতা, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকার কারণে শিল্প কারখানাগুলো ৫০-৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন সক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির কারণে গত ১০ মাসে শিল্পগুলো মূলধনী যন্ত্রপাতি ৫৬ শতাংশ, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ৩১.৩ শতাংশ এবং কাঁচামাল ৩১.৫ শতাংশ কম ঋণপত্র খুলেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা দরকার যেন কোনো অবস্থাতেই শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত না হয়।
এছাড়া সরকারকে কমমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে দেশীয় শিল্প তাদের সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে বলেও জানান বিসিআই সভাপতি।