নেট রিজার্ভ বাড়াতে মে মাসে ইডিএফ’র ব্যয় কমানো হলো ৪০০ মিলিয়ন ডলার
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার নেট রিজার্ভ বাড়াতে চলতি বছরের মে মাসে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ব্যয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের সময় জুনের মধ্যে বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বাড়ানোর পরামর্শ দেয় আইএমএফ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে নেট রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের কম আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য নেট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে না। বরং তারা মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনা করে; গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ২৯.৮৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস রিজার্ভের মধ্যে ইডিএফও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, প্রকাশ করা রিজার্ভের উপর ইডিএফের ব্যয় কমানোর কোনো প্রভাব নেই।
সর্বশেষ সমন্বয়ের পর ইডিএফ এর আকার দাঁড়িয়েছে ৪.৬ বিলিয়ন ডলার; যা গত ডিসেম্বরে প্রথমবার কমানোর আগ পর্যন্ত ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। ৬ মাসের ব্যবধানে তহবিল থেকে ২.৪ বিলিয়ন ডলার কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, "আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী আমাদের জুনের মধ্যে ২৪ বিলিয়নের মতো নেট ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ রাখতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের আমদানি ব্যয় আগের তুলনায় অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এক্সপোর্টে সেভাবে গ্রোথ নেই। এক্ষেত্রে ইডিএফ এর আকার কমানো ছাড়া নেট রিজার্ভ বাড়ানোর খুব বেশি টুল হাতে নেই।"
সামনে আবারও এ ধরনের সমন্বয় হতে পারে- এরকম ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, "তারপরও জুন শেষে নেট রিজার্ভ হিসাব করলে সেটি ২৪ বিলিয়নের নিচে থাকতে পারে।"
আরেক কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরে ১২.৭৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। প্রায় প্রতিদিনই সরকারি আমদানি এলসির পেমেন্ট করতে এসব ডলার বিক্রি করা হয়।
এদিকে রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইডিএফের আকার কমানো হলে তাদের সংকট আরও বাড়বে।
বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম টিবিএসকে বলেন, "আমাদের কাছে আসা অর্ডার অনেক কমে গেছে। তার উপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় জন্য আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইডিএফ ব্যয় কমানো হলে আমাদের সমস্যা আরও বাড়বে।"
ইডিএফ থেকে লোন নিয়ে মূলত রপ্তানি পণ্যের র ম্যাটেরিয়াল আমদানি করা হয়। পরে রপ্তানিমূল্য দেশে আসলে সেখান থেকে ইডিএফ লোনের ডলার ইন্টারেস্টসহ কেটে রাখা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হতো, গত এপ্রিল মাসে সেটি ৩২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪.৬৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এছাড়াও, রপ্তানি আয় দেশে আনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর উদ্যোগের কারণেও ইডিএফ ঋণের জন্য আবেদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মো. জাকির হোসেন চৌধুরি টিবিএসকে বলেন, "আমাদের কাছে এখন আগের তুলনায় লোনের আবেদন আসছে অনেক কম। মূলত সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু কারণে ইডিএফ থেকে লোনের চাহিদা কমছে। এছাড়া রপ্তানিকারকদের জন্য ইএফপিএফ গঠন করা হয়েছে। তারা চাইলে এই ফান্ড থেকে ৪% সুদে লোন নিতে পারেন।"
রোববার পর্যন্ত ফান্ডটি থেকে ৩,৮৮৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।