কোরবানির ঈদ ঘিরে জমজমাট মৌসুমি ব্যবসা
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর খাবারসহ কোরবানির আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের মৌসুমি ব্যবসা।
বিভিন্ন গলির মোড়ে একটু এগোলেই মিলছে খড়, ভুষি, ঘাসসহ পশুর খাবার। পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে মাংস কাটার খাট্টা ও পাটি। বিক্রেতারা বলছে, তারা সারা বছর অন্য কাজ করে ঈদের আগের ৫ দিন বিক্রি শুরু করেন। এবার গতবারের চেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও কারওয়ান বাজার কামারখানা ঘুরে দেখা যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
ঈদের দুই দিন আগে মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, হাতিরপুল সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।
দেখা যায়, ক্রেতারা কোরবানির পশুর জন্য খড়, ঘাস, ভুষি কিনছেন। অনেকে আবার কিনে নিচ্ছেন পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি-চাপাতি। আর মাংস কাটার জন্য কাঠের গুঁড়ি। মাংস ছড়িয়ে রাখার জন্য হোগলা।
মগবাজার আমবাগানে কথা হয় তেঁতুল কাঠের গুঁড়ি বিক্রেতা মোহম্মদ জুম্মনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পেশায় তিনি কসাই। তবে ঈদুল আজহার সময় কাঠের গুঁড়ি বিক্রি করেন। মাদারিপুর থেকে গাছ কিনে সেগুলো স' মিলে বিভিন্ন আকারে কাটা হয়। এ বছর ১ লাখ ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে এনেছেন তিনি।
জুম্মন বলেন, গতবছর ১০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছিল তার। গাছের গুঁড়ি ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করেন।
কারওয়ান বাজারের গোখাদ্য বিক্রেতা মোহম্মদ ইউসুফ বলেন, তিনি প্রতি কেজি গমের ভুষি ৮০ টাকা, প্রতি আঁটি খড় ২০ টাকা, প্রতি আঁটি ঘাস ২০-৩০ টাকা, কাঁঠাল পাতার আঁটি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
মোহম্মদ ইউসুফ পেশায় কাঠমিস্ত্রি। এবার প্রায় ৩ লাখ টাকার গোখাদ্য পাইকারিতে কিনেছেন তিনি।
গতকাল বিকেলে তিনি বলেন, প্রায় ৫০ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। গতবছর সব বিক্রি করতে না পারায় লোকসান হয়েছিল। তবে এবার বোঝা যাচ্ছে ভালো বিক্রি হবে। ঈদের আগের দিন বিক্রি কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা এই বিক্রেতার।
কোরবানির পর মাংস রাখার হোগলা বা পাটি (বড়গুলো) বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগে ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৮১০টি গরু-মহিষ, ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৭১১টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ২৪৭টিসহ মোট ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৮টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এবছরও এমন পরিমাণে পশু কোরবানি হলেও এবার পশুখাদ্যের বাজার বেশ বড়। জনপ্রতি ৪০০ টাকার গোখাদ্য কিনলেও এ বাজার প্রায় ১০০ কোটি টাকার।
কারওয়ান বাজারে কামারপট্টিতে বেড়েছে ব্যস্ততা
প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই চাহিদা বেড়ে যায় গোশত কাটার বিভিন্ন সরঞ্জামের। ক্রেতাদের কেউ আসে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল কিনতে আবার কেউবা আসেন শান দেওয়ার জন্য। আর তাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে কামাররা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেললাইন সংলগ্ন কামারপট্টিতে দেখা যায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে কোরবানির পশু জবাই ও গোশত কাটার বিভিন্ন আকারের চাপাতি, দা, বটি, ছুরি, কুড়াল। দোকানের ভেতর থেকে ভেসে আসছে দা, বটি, শান দেয়ার শব্দ।
মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন টিবিএসকে বলেন, এক কেজি ওজনের স্প্রিং লোহার চাপাতি, দা, বটির দাম ৮০০ টাকা। এছাড়া ১৫০-৩০০ টাকার চাকু বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে লোহার দাম। তিনি বলেন, মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটে ১২টি দোকান আছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সেখানে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বিক্রি হয়।
মোহাম্মদ হারুন বলেন, ঈদুল আজহার সময় বাদে অন্য সময় তাদের বিক্রি তেমন ভালো না। তারা এই ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
এছাড়াও মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটের পাশেই ফুটপাতে প্রায় ১৫টি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে দা, বটি সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
মিরপুর এলাকা থেকে আগত মোহম্মদ রনি একটি চাপাতি, চামড়া ছাড়ানোর ছোট চাকু কিনেছেন ৮০০ টাকা দিয়ে। রনি বলেন, 'কোরবানির জন্য গরু কেনা হয়েছে। এখন কাটার সরঞ্জাম কেনা শেষ করলাম।'