ওএমএসে বরাদ্দ কমবে, টিসিবির মাধ্যমে সুবিধাভোগী ছড়াবে ইউনিয়ন পর্যন্ত
ট্রাকসেল, স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তর ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কার্যক্রমে খোলাবাজারে যে চাল-আটা বিক্রি করতো তার পরিমাণ ও বিক্রয় কার্যক্রম কমিয়ে আনা হচ্ছে। কারণ ওএমএসের এক বছরের বরাদ্দেরও বেশি চাল খাদ্য অধিদপ্তর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-কে প্রদান করবে এক কোটি পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য।
জানা যায়, জুলাই মাস থেকে এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের কাছে প্রতি মাসে ৫ কেজি করে চাল বিক্রি করবে টিসিবি, যা সরবরাহ করবে খাদ্য অধিদপ্তর। ওএমএসের বিক্রি কমিয়ে এই চালের যোগান দিয়ে যাবে খাদ্য অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্য অধিদপ্তর ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন ওএমএস কার্যক্রম চালাতো না। কিন্তু টিসিবির কার্ডধারীরা ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে। যে কারণে ওএমএসএর ভর্তুকি মূল্যের চাল এখন ইউনিয়ন পর্যায়ের দরিদ্র মানুষগুলোর কাছেও পৌঁছাবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টিসিবি প্রতি মাসে এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে ৫ কেজি করে চাল বিক্রি করলে মোট ৬ লাখ টন চালের প্রয়োজন। যেটা পুরোপুরি সরবরাহ করবে খাদ্য অধিদপ্তর। অথচ চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ওএমএসে চাল বিক্রি করা হয়েছে, যে বরাদ্দের পরিমাণ ৫.৫ লাখ মে. টন।
খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, সারাদেশের এক কোটি পরিবারকে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে চাল দেওয়া হলে ওএমএসে চাহিদা কমে আসবে। তবে এখনো এমন অনেক দরিদ্র মানুষ রয়েছেন যারা কার্ডধারী না। তাদের জন্য সীমিত পরিসরে ওএমএস কার্যক্রম চললেও এতে বরাদ্দ অনেক কমিয়ে আনা হবে বলে জানা গেছে। তবে কখনো যদি বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় তখন প্রয়োজনমত বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
একদিকে বিক্রয়ের পরিমাণ কমালেও মোটা দাগে কিন্তু দরিদ্র মানুষের কাছে চাল বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাবে। কারণ ছোট পরিসরে ওএমএস কার্যক্রম চলবে, এক কোটি কার্ডধারীকে আবার টিসিবি দিবে।
এদিকে টিসিবি বলছে, টিসিবি যে চাল বিক্রি করবে সেটা খাদ্য অধিদপ্তরের দামেই বিক্রি করবে।
টিসিবির তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক অফিসের প্রধান মো. হুমায়ুন কবির টিবিএসকে বলেন, 'তেল-চিনির মতো করে টিসিবি টেন্ডার দিয়ে চাল কিনবে না। খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএসের মাধ্যমে যে চালটা বিক্রি করে সেটাই এখন টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। দামও পরিবর্তনের কোন পরিকল্পনা নেই।'
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিপণন সংস্থা টিসিবি তাদের কার্ডধারী পরিবারগুলোর মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে তেল, চিনি, মসুর ডাল এবং রোজার মাসে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করে। পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের ডিলার রয়েছে ৩২০০ জন। এই ডিলাররা আগের মতোই খাদ্য অধিদপ্তরের চাল উত্তোলন করবে এবং টিসিবির ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেবে। তবে এখানে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে চাহিদা পাঠাবে টিসিবি। তার বিপরীতে খাদ্য অধিদপ্তরের ডিলারদের মাধ্যমে টিসিবির ডিলারদের কাছে চাল পৌঁছে দেওয়া হবে।
খাদ্য অধিদপ্তর ঢাকা মহানগর, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এবং কিছু পৌরসভাতে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ঢাকার একেকজন ডিলার দুই দিনে ৪ টন আটা এবং ১ টন চাল বরাদ্দ পায়। কিন্তু ওএমএসে বিক্রির জন্য এই বরাদ্দ অর্ধেক বা অর্ধেকেরও কমে নামিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে বিক্রয় কার্যক্রমের পরিমাণও কমিয়ে আনা হবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে ওএমএসের চালে ও আটায় বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৩.৫ লাখ টন ও ৩.৭৫ লাখ টন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি, মানুষের আয় কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়া সহ নানা কারণেই সরকার ওএমএসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যে কার্যক্রম বছরের এক বা দুটি নির্দিষ্ট সময়ে হতো সেটা এবার সারাবছরই পরিচালনা করা হয়েছে। এতে করে খরচও বেড়ে যায়।
পরে চালের বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫.৫ লাখ টন করা হয়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একটা নির্দিষ্ট সময় বন্ধ থাকার পর গমের আমদানি কমে যায়। যে কারণে ওএমএসে গমের বরাদ্দ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয় সরকার, যখন সারাদেশেই আটার দাম দ্বিগুণ হয়ে পড়ে।
খাদ্য অধিদপ্তরের বিতরণ ও বিপণন বিভাগের পরিচালক তপন কুমার দাস বলেন, 'কার্ডধারীর বাইরেও দরিদ্র মানুষ রয়েছে। তারা যাতে বাদ না পড়েন সেজন্য সব জায়গায় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। হয়তো পরিমাণের দিক থেকে কিছুটা কাটছাঁট করা হতে পারে।'
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র মানুষের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে চাল-আটা বিক্রির কার্যক্রমের জন্য টিসিবির মত পরিবারপ্রতি কার্ড বিতরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। টিসিবির কার্ডধারী এক কোটি দরিদ্র পরিবার নির্দিষ্ট থাকায় প্রাথমিক অবস্থায় টিসিবির মাধ্যমেই চাল বিক্রির এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্য অধিদপ্তরের ডিলারের নামে অভিযোগের শেষ নেই। দরিদ্র মানুষের জন্য নেওয়া চাল-আটা অন্য স্থানে বিক্রির অভিযোগ বিস্তর। ওএমএস কার্যক্রম একটা সুসংগঠিত পদ্ধতির মধ্য দিয়ে শুরু হলে এই অনিয়মের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে।