২০২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসে রেকর্ড ৬১,৪৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়
দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড ৬১,৪৬৪.৭২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ দুই মাসে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের ৫৯,১৫৯.৮৩ কোটি টাকার তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ৩.৯০ শতাংশ বেড়েছে।
যদিও সংগৃহীত এই রাজস্ব, ৭৪,২০৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের এমন রেকর্ড দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক খবর। চোরাচালান বন্ধ, জালিয়াতি রোধসহ শুল্ক ফাঁকি রোধে কাস্টমসের নানান উদ্যোগের কারণে রাজস্ব আদায় বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্য যেমন- গাড়ি, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্সসহ বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দিকে রাজস্ব আদায় কম হয়েছিল। তবে বাজেটের আগে মে এবং জুনে গাড়ি আমদানি বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়ে যায়।
আমদানি ২০২১-২২ অর্থবছরে মতো স্বাভাবিক থাকলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা হতো বলে মনে করছেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার মোঃ বদরুজ্জামান মুন্সি টিবিএসকে বলেন, "চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ইতিহাসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জন্য একটি মাইলফলক।"
অর্থবছরের শেষের দিকে রাজস্ব বৃদ্ধি
কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায়ে ক্রমাগত ঋণাত্মক প্রবদ্ধি হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বাজেটকে টার্গেট করে অর্থবছরের শেষের দিকে আমদানি বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে। বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে মূলত আমদানিকারকরা বাড়তি পণ্য আমদানিতে নজর দেন। এ কারণে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল, মে, জুন মাসে আমদানি পূর্বের মাসগুলোর তুলনায় বেড়ে যায়।
এই ধারাবাহিকতায় বাজেটকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত মার্চ থেকে আমদানি বাড়তে শুরু করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুন মাসে ৬,৩৬৫.৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মাস হিসেবে এটি ছিল সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়।
এছাড়া, জুলাই মাসে আদায় হয় ৪,৭৮১.২১ কোটি টাকা; আগস্টে ৫,৪৯৮.৪৮ কোটি টাকা; সেপ্টেম্বরে ৫,১০৫.১৮ কোটি টাকা; অক্টোবরে ৪,৯১৮.৬৫ কোটি টাকা; নভেম্বরে ৫,৪৭৯.৫৬ কোটি টাকা; ডিসেম্বরে ৪,৩৮৮.০৫ কোটি টাকা; জানুয়ারিতে ৪,৭৪৪.৬১ কোটি টাকা; ফেব্রুয়ারিতে ৪,২৮৭.৭৯ কোটি টাকা; মার্চে ৫,০৫২.৫২ কোটি টাকা; এপ্রিলে ৪,৫৩৪.০৫ কোটি টাকা এবং মে মাসে ৬,৩০৮.৯১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা পরিস্থিতির সময়েও কাস্টমসের রাজস্ব আয় ৬১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো সংবাদ।
"এতে প্রতীয়মান হয় যে, দেশে আমদানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে যেমন সাপ্লাই চেইনে উন্নতি ঘটেছে, তেমনি রাজস্ব আয়ও বেড়েছে," যোগ করেন তিনি।