আম রপ্তানিতে নজর মেরিডিয়ান অ্যাগ্রোর
দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের উপযোগী নয়, এমন ধারণাকে উপেক্ষা করে মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ বান্দরবানের লামা উপজেলায় গড়ে তুলেছে আমের বাগান। সেই বাগানে উৎপাদিত আম এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
২০১০ সালে মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো ২০ টন আম উৎপাদন করেছিল; যা ২০১৬ সালে বেড়ে ১২০ টনে পৌঁছায়। এ বছর কোম্পানির লক্ষ্য প্রায় ১৮০ টন আম উৎপাদন করা।
মেরিডিয়ানের কর্মকর্তারা জানান, আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে আম কিনে বিদেশে রপ্তানি করতো। ২০২১ সালে কোম্পানি নিজেই আম রপ্তানি শুরু করে। সে বছর কাতার এবং সৌদি আরবে প্রায় ৬০০ কেজি আম রপ্তানি করে মেরিডিয়ান; পরের বছর ২০২২ সালে রপ্তানি করে প্রায় ৭০০ কেজি।
চলতি বছর নেদারল্যান্ডে রপ্তানি শুরু হয়েছে। কানাডায়ও শুরু হয়েছে রপ্তানির প্রক্রিয়া। চলতি বছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্র প্রায় ৭ টন।
মেরিডিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান কোহিনূর কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শুরুটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। পাগল না হলে নতুন কিছু সৃষ্টি হয় না। তখন মেরিডিয়ান হোটেল খুব লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানকার টাকা এনে এখানে বিনিয়োগ করা হয়। এই অঞ্চলের মানুষ চাষ পরবর্তী হারভেস্টিং এবং প্যাকেটজাত করতে পারতেন না। দেখা যেত, আম ঠিকভাবে না রাখা বা পরিবহনের প্রক্রিয়া না জানার কারণে চট্টগ্রামে আসতে আসতে অর্ধেক আম পচে যেত। ফলে রাজশাহী থেকে লোক এনে এখানকার মানুষদের শিখিয়েছি।"
পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য ২০০৭ সালে ভারতের ইন্ডিয়ান হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারের সহায়তা নেয় মেরিডিয়ান। ভারতের মালদা থেকে আম্রপালী, মল্লিকা, রাঙ্গুই জাতের প্রায় ১৪ হাজার আমের চারা আমদানি করে।
এসব চারা রোপণের মাধ্যমে প্রায় ৮০ একর বাগান গড়ে তোলা হয়। তিন বছর পর ২০১০ সালে পরিণত প্রায় ৫ হাজার গাছ থেকে ২০ টন আম উৎপাদিত হয়।
চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা বাগানে গিয়ে কেজিপ্রতি আমের মূল্য দিতে চান ১২ টাকা, যেখানে উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ২৪ টাকারও বেশি।
এরপর পথ খুঁজতে থাকে মেরিডিয়ান। পরের বছর থেকে নিজেরাই বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
থাইল্যান্ড থেকে প্যাকেটজাতকরণের জন্য কাগজের বক্সের নমুনা আনা হয়। এরপর দেশে তৈরি করা হয় নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বক্স। বর্তমানে ৫ কেজির বক্সে করে আম বিক্রি করছে মেরিডিয়ান।
খুব অল্প সময়ে আম্রপালী ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাজারে। তখন মেরিডিয়ান বিদেশি নতুন নতুন জাতের আম নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৪-১৫ সাল থেকে থাইল্যান্ডের উন্নত জাতের চারা আনা শুরু হলো। তবে বাণিজ্যিক আমদানি নয়।
গ্রুপের এমডি এবং চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কাজে থাইল্যান্ডে গেলে ব্যাগে করে ২০, ৩০ বা ৫০টি করে চারা নিয়ে আসতেন। এরপর এসব চারা বাগানে চাষ করা হয়। তিন বছর পর গাছ থেকে আবার চারা উৎপাদন করা হয়। এভাবে থাই নাম ডক মাই, থাই কাঁচা-মিঠা, সর্নালী, থাই বানানা, ফোনিয়া, থাই মহাসেন জাতের আমের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।
এরপর ২০১৮ সালের পর একইভাবে ভিয়েতনামের রেড কিং, থাইল্যান্ডের থাই কান্ট, অ্যাপ্লিম্যাঙ্গো জাতের আম যুক্ত করা হয়। বর্তমানে ৩৮ প্রজাতির আম চাষ করছে মেরিডিয়ান। এরমধ্যে কিছু জাত গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। আর বেশিরভাগই উৎপাদিত হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে মেরিডিয়ানের বাগানে শুধু মৌসুমি আম চাষ করা হতো। বছরের বাকি সময় বাগান কাজে লাগানো যেত না। কিন্তু বর্তমানে সারাবছরই আম চাষ হচ্ছে। কাটিমন জাতের আম সারাবছরই হয়।
চট্টগ্রাম মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রক্রিয়াজাত শুকনো ফল রপ্তানির পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে, যা এখন রয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন পর্যায়ে।
কোহিনূর কামাল বলেন, "ফল ডিহাইড্রেটেড করা গেলে সহজে রপ্তানি সহজ হবে। থাইল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বে এর ফলে অপচয় কম হয়। আমাদের দেশে অন্তত ৪০ শতাংশ ফল নষ্ট হয়ে যায়। এটি নিয়ে ভাবা উচিত।"
আম চাষের পাশাপাশি ২০২০ সাল থেকে নার্সারিতে বিদেশি উন্নত জাতের আমের চারা বিক্রিও শুরু করেছে মেরিডিয়ান। বর্তমানে আম্রপালী, থাই নাম ডক মাই, থাই কাঁচা-মিঠা, থাই বানানা, রেড কিং, কাটিমন, হাড়িভাঙাসহ ১২ জাতের চারা বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।