পুঁজির নিরাপত্তা পেলেই উঠবে ফ্লোর প্রাইস: বিএসইসি চেয়ারম্যান
সাধারণ মানুষের পুঁজির নিরাপত্তা পেলেই কেবল ফ্লোর প্রাইস উঠানো হবে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, "বাজারে একটা শক্ত অবস্থান দেখতে পেলেই ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেব। যখনই আমরা দেখবো বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ, তাদের পুঁজি নিরাপদ, তখনই আমরা ফ্লোর প্রাইস সরিয়ে দেব। আমরাও অধীর আগ্রহে আছি কখন এই ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে পারবো।"
মঙ্গলবার ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ইকোনমিক চ্যালেঞ্জেস ফর বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট: পসিবল রেমেডিস শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাজার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ প্রথম ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে কমিশন। পরবর্তীতে কয়েক ধাপে এ ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয় তারা।
গত বছরের ২৮ জুলাই মার্কেট পরিস্থিতি আবার খারাপ হলে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে কমিশন। এরপর ১৬৮ কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আংশিক প্রত্যাহার করা হলেও এ বছরের ১ মার্চ এসব কোম্পানির ওপর আবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়; যা এখনও চলছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, "আমাদের কমিশনের বয়স প্রায় তিন বছর ২ মাস। আমরা যেদিন দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেদিন বাংলাদেশের সব মানুষ ঘরে থাকতো। সেসময় কোন ইকোনমিক কার্যক্রম ছিলো না। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ যে হঠাৎ শুরু হবে তাও আমরা বুঝতে পারিনি। এটা আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ।"
"এর ফলে খাদ্যশস্যসহ চাপ বাড়লো জ্বালানি খাতের উপর। যার ফলে এলএনজিসহ সকল জ্বালানির দাম বাড়লো। আর এর প্রভাব পড়লো শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন সেক্টরের উপর," বলেন তিনি।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, "আমাদের পুঁজিবাজারে এতোগুলো চাপ, যেখানে ঠোঁটের নড়াচড়ার প্রভাবে মার্কেটের সূচক ওঠা-নামা করে। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম রিজার্ভের সাথে সাপ্লাই ভোলাটিলিটি কমতে শুরু করেছে। সাথে ক্যাপিটাল মার্কেটের ইনডেক্সও। আর তাই বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। আমরা তখন নিজেদের অনিচ্ছাতেই ফ্লোর প্রাইস দিয়েছিলাম।"
ইআরএফ'র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরএফ সদস্য মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রাফায়েত উল্লাহ মৃধা।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, "বাংলাদেশের অগ্রগতির যে অদম্য অগ্রযাত্রা তার সাথে তাল মেলাতে হলে পুঁজিবাজারকে আরও অনেক দূর এগোতে হবে। ভারতের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু ভারতের পুঁজিবাজারের সাইজ অনেক বড়। কারণ মাথাপিছু আয় ছাড়াও আরেকটা বিষয় যে ক্যাপিটাল মার্কেটকে প্রভাবিত করে, তা হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।"
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, "আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের মুল অসুবিধাগুলো হলো তারল্য সংকট, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। আস্থাহীনতা কমাতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। মার্কেটের যে পতন চলছে তা দীর্ঘমেয়াদী নয়। আমরা ডিএসই এবং সিএসই এটা নিয়ে কাজ করছি।"
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য শক্তিশালী পুঁজিবাজার ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, "মার্কেটে আরো ডেপথ ক্রিয়েট করতে হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের দিকে আমাদের মনোনিবেশ করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মাধ্যম ব্যাংক নির্ভর হতে পারেনা।"
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএস পারভেজ তমাল বলেন, "উন্নত দেশে ভালো ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির ইনডেক্সের উপরে পুঁজিবাজারের অবস্থা বোঝা যায়। আমাদের পুঁজিবাজারের সব ব্লু চিপ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক। তবে এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও সুযোগ আছে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার।"
অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডের (এএএমসিএমএফ) চেয়ারম্যান হাসান ইমাম বলেন, "এখন আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন ক্রাইসিস মোমেন্ট অতিবাহিত করছি, এর আগেও এমন কয়েকটি ক্রাইসিস পার করতে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সংকটে ডলার ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব প্রায় সব কোম্পানির উপরই পড়েছে।"
তিনি বলেন, "ফ্লোর প্রাইসের জন্য তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। যুগে যুগে এমন অনেক ক্রাইসিস মোমেন্ট এসেছে, কিন্তু যখন এ ক্রাইসিস কেটে যায় তখন কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বড় পরিসরে লাভবান হয়।"
তিনি মনে করেন আরও ৬ মাস এই পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে; এরপর মার্কেট এগিয়ে যাবে।