পাটকলের ছাদে সোলার পার্ক স্থাপনে বিনিয়োগে আগ্রহী কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)- এর আওতাধীন পাটকল ও গোডাউনের ছাদে সোলার পার্ক স্থাপনে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়েছে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, চীন, ওমান ও ফিলিপাইনের সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করা কোম্পানি রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তারা দরপত্র জমা দিয়েছে।
২৫ জুলাই ১৩টি পাটকলের ছাদ ইজারা দিতে আর্ন্তজার্তিক দরপত্র আহ্বান করে বিজেএমসি। এক দফা সময় বাড়ানোর পর দরপত্র খোলা হয় ২৩ আগস্ট।
বিজেএমসির কর্মকর্তারা জানান, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে পাটকলের ছাদ ব্যবহারে সরকারের নির্দেশনার অংশ হিসাবে ছাদ ইজারা দেওয়া হবে। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেহেতু বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে, সেই ক্ষেত্রে এফডিআই বা বিদেশি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তারা জানান, সোলার পার্ক স্থাপনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পার্ক স্থাপনের বিষয়গুলো টেকনিক্যাল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করে ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান চুড়ান্ত করবে। পাটকল ভাড়া সংক্রান্ত অন্যান্য প্রক্রিয়া বিজেএমসি সম্পন্ন করবে।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান আনিস মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বিদ্যুতের অন্তত ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত জায়গা খুব কম। এজন্য সরকার বড় বড় ভবনের ছাদে সোলার পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। সেটার অংশ হিসাবে পাটকলের ছাদ ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পাটকলের কারখানা ও গোডাউনগুলো অনেক বড়, অনেক জায়গাজুড়ে রয়েছে, যা আপাতত কোনো কাজে লাগছে না। তবে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাটকলের ফ্যাক্টরি ও গোডাউন ভাড়া বা ইজারা দেওয়া হবে।
আনিস মাহমুদ বলেন, সোলার পার্ক জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। দেশের বিদ্যুৎ খাতে অবদান রাখবে।
আগ্রহী প্রতিষ্ঠান
দরপত্র জমা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ইন্দোনেশিয়ার সেলার সিএনআই ক্রিয়েটিভ সেন্টার, ওমানের টপ পয়েন্ট ট্রেডিং, সিএইচএনটি সোলার বাংলাদেশ কো. লিমিটেড, সানটেক এনার্জি লিমিটেড, বেঙ্গল সোলার জেভি, কোপেনহেগেন আরবান সোলার পার্ক বিডি কনসোর্টিয়াম, বে ট্রিনা কনসোর্টিয়াম এবং লেসসো কনসোর্টিয়াম।
তাদের মধ্যে কোপেনহেগেন আরবান সোলার পার্ক বিডি কনসোর্টিয়াম ও বে ট্রিনা কনসোর্টিয়াম এর লিড পার্টনার হলো বে গ্রুপ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বে এমপোরিয়াম লিমিটেড। বে ট্রিনার টেকিনক্যাল পার্টনার চীনের ট্রিনা সোলার।
আর লেসসো কনসোর্টিয়াম-এর লিড পার্টনার লেসসো এনার্জি ডেভলপমেন্ট। এছাড়া একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে বেঙ্গল সোলার। তবে সেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির নাম জানা যায়নি।
ছাদ এবং ইজারার শর্ত
দরপত্রের নথি অনুযায়ী, ইজারার মেয়াদকাল হবে ২০ বছর। আর প্রথমবার প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য আসলে মেয়াদ আরো বাড়ানো হতে পারে।
ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সোলার পার্কের মালিকানা হস্তান্তর হবে বিজেএমসির হাতে।
নথিপত্রে দেখা যায়, গোডাউনসহ চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের ১৩টি পাটকলে মোট ৬৩ লাখ বর্গফুট জায়গা রয়েছে।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর দ্য এনার্জি রিসার্চের পরিচালক মোঃ শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ছাদে প্রতি মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৭০ হাজার বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। সুতরাং, ১৩টি পাটকলের ইজারা দেওয়া জায়গা থেকে ৯০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ২,১৬১টি রুফটপ সোলার সিস্টেম থেকে মোট ১৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
এর মধ্যে, ৮৪.৫৮৮ মেগাওয়াট আসে রুফটপ নেট মিটারিং সুবিধা থেকে, অর্থাৎ খরচের চেয়ে উৎপাদন বেশি হলে এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৬৯.৯৩৪ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় নেট মিটারিং ছাড়া।
দরদাতাদের প্রত্যাশা
কোপেনহেগেন আরবান সোলারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু সালেহ বলেন, কৃষি জমির উপর সোলার পার্ক স্থাপন করলে জমির পরিমাণ কমে যাবে। সেই জন্য নবায়যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ছাদ ভালো উপায়। এছাড়া পার্কে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, যা দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব এবং আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিবেচনায় আমরা সব পাটকল ইজারা নিতে পৃথক দুটি দরপত্র জমা দিয়েছি।
আবু সালেহ বলেন, রুফটপ সোলার পার্কে মোট বিনিয়োগের ৮০-৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৪০-৫০ মিলিয়ন ডলার আসবে এফডিআই থেকে। আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জায়গাগুলোতে ১০০-১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।