বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি সমাধানের আশ্বাস গভর্নরের
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের আশ্বস্ত করেছেন, তাদের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতির সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি ডেভিড হাসানাত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই দুঃস্বপ্নের যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য আমরা তার সহায়তা চেয়েছি।'
বিপ্পা সভাপতি বলেন, গভর্নর আশ্বাস দিয়েছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো জ্বালানি আমদানিকারকদের জন্য ডলারের বিনিময় হার কীভাবে নির্ধারণ করছে, তা নিবিড়ভাবে মনিটর করা হবে—যাতে আগের মতো একাধিক বিনিময় হার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ক্ষতির মুখে না ফেলে।
ডেভিড হাসানাত বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা গভর্নরকে আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এখনও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার পাওনা এখনও পরিশোধ না করায় মার্চ মাসে রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) আমদানির জন্য তারা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না।
'বিপিডিবি ও সরকারের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তিনি আমাদের বার্তা সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেবেন,' বলেন হাসানাত।
৩,৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার এইচএফও-ভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গত দুই-দেড় বছরে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে। তারা বাজারমূল্যে ডলার কিনে জ্বালানি আমদানি করলেও বিপিডিবি তাদেরকে অফিশিয়াল বিনিময় হার অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করেছে, যা বাজারদরের চেয়ে অনেক কম।
ধাপে ধাপে অফিশিয়াল বিনিময় হার ও বাজারমূল্যের ব্যবধান কমায় জ্বালানি আমদানিকারকরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন।
তবে সম্প্রতি এই ব্যবধান আবার বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা ফের শঙ্কিত হয়ে উঠছেন।
হাসানাত বলেন, '১১৯ টাকা ডলার রেটে যেসব এলসি খোলা হয়েছিল, সেগুলোর জন্য এখন ১২২ টাকা গুনতে হবে। যদি আরও বাড়ে, তাহলে অনেক কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাবে।'
বর্তমানে বিপিডিবির কাছে দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের পাওনা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার কথা থাকলেও ছয় মাসের বেশি সময় ধরে তা ঝুলে আছে।
বিপিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে বিপ্পা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এইচএফও-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করা হলে মার্চ মাসের প্রথমার্ধে দেশে মারাত্মক বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিতে পারে।
বিপিডিবির প্রাক্কলন অনুসারে, রমজান ও সেচ মৌসুমের কারণে মার্চে গ্রিডের বিদ্যুৎ চাহিদা এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে। অন্যদিকে বিপ্পার আশঙ্কা, জ্বালানি ঘাটতি না মিটলে প্রায় ২,৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার এইচএফও-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হাসানাত বলেন, ঋণপত্র খোলার পর এইচএফও সরবরাহ পেতে দেড় মাস সময় লাগবে।