১২.৫৪ শতাংশে পৌঁছেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ সত্ত্বেও, আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশের উচ্চতা ছুঁয়েছে। এতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে গেছে।
আগস্টে ২৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে সার্বিক বা গড় মুল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯২ শতাংশ; এর আগে মে মাসে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৯৪ শতাংশ ছিল সার্বিক মূল্যস্ফীতি, তার চেয়ে সামান্যই কমে আগস্টে। প্রসঙ্গত, গত মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি হারে হচ্ছে।
তবে আগস্টে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে ৭.৯৫ শতাংশ হয়েছে, আগের মাস জুলাইয়ে এ হার ছিল ৯.৪৭ শতাংশ।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর থেকে ৯ শতাংশের বেশি ছিল খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি। এমনকী দুই অঙ্কেও পৌঁছানোর পর্যায়ে গিয়েছিল– বাংলাদেশের ইতিহাসে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এত উচ্চ থাকার প্রবণতা আগে কখনো দেখা যায়নি। তাই এটি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসা, ভোক্তাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির হয়েছে।
তবে মূল্যস্ফীতির সার্বিক অবস্থার চেয়ে মজুরি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫৮ শতাংশের নিম্ন-অবস্থানে ছিল আগস্টে। অবশ্য এই হার আগের মাসের তুলনায় দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়েছে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিশ্বব্যাপী এক বড় উদ্বেগ।
গত ২৩ মার্চ প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ফুড সিকিউরিটি আপডেট প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃতঅর্থে, ১৬১ দেশের মধ্যে ৯০.৬ শতাংশ দেশে– খাদ্য মূল্যস্ফীতি সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে ছাড়িয়ে গেছে (যা সার্বিক ভোক্তা মূল্য সূচকের বছরওয়ারি পরিবর্তনের সাথে তুলনা করে হিসাব করা হয়)।
তবে এই প্রবণতায় পরিবর্তন আসছে।
গত আগস্টে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসারণী দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন অবস্থানে আসে। আগের মাসে বাড়ার পর, এই পড়তি অবস্থান দেখা যায়। কারণ, এসময়ে চাল ও চিনি ছাড়া বিশ্ববাজারে প্রায় সকল খাদ্যপণ্যের দামই কমেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মূল্যসারণীতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় এমন খাদ্যপণ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আগস্টে মূল্যসারণীর গড় ছিল ১২১.৪ পয়েন্ট, যা আগের মাসে ছিল ১২৪ পয়েন্ট।
২০২১ সালের মার্চের পর গত আগস্টেই সর্বনিম্ন ছিল জাতিসংঘের খাদ্য মূল্যসারণীর গড়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালের মার্চে এটি সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়, আগস্টে এর চেয়ে ২৪ শতাংশ কমেছে।
কিন্তু, বাংলাদেশে বৈশ্বিক এই অবস্থার প্রতিফলন হয়নি। বরং, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দরিদ্র্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের খাদ্য সহায়তার মাত্রা কমায় – পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি চড়া হয়েছে, বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিভিন্ন ধরনের সরকারি কর্মসূচির আওতায় এক বছরে খাদ্য বিতরণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার টন।
গত ১৫ জুন পর্যন্ত সরকার প্রায় ২৭ লাখ ৫২ হাজার টন চাল ও গম বিতরণ করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৬৯ হাজার টন।
আনুষ্ঠানিক তথ্যে, ফসলের উচ্চ উৎপাদন খরচসহ জোগানকে ব্যাহত করছে, এমন কিছু বিষয়কে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ানোর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।