আরও ২ ব্যাংককে রুপিতে লেনদেনের অনুমতি, অপেক্ষায় ৬ ব্যাংক
চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ-ভারত রুপিতে বাণিজ্য চালু হওয়ার পর থেকে আরও অনেক বাংলাদেশি ব্যাংক ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার অনুমতি পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ডলারের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে দুই দেশের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার এই উদ্যোগ নেয় উভয় দেশের সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে আরও দুটি ব্যাংক- ইসলামী ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। এ নিয়ে এই ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪টিতে।
১১ জুলাই ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য চালু হওয়ার সময় সোনালী ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডকে (ইবিএল) বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ডলারের পরিবর্তে রুপিতে এলসি খোলার অনুমোতি দেওয়া হয়।
এছাড়া আরও ৬ ব্যাংক- ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য পরিচালনার অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই ব্যাংকগুলোর আবেদন বর্তমানে পর্যালোচনাধীন রয়েছে।"
এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদ বলেন, "আমরা একমাস আগে রুপিতে বাণিজ্য ব্যবস্থায় যোগদানের জন্য আবেদন করেছিলাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রার বাইরে পরিচালিত এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা আমাদের ব্যাংকের জন্য নতুন। তবুও আমরা বিশ্বাস করি, এটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ বয়ে আনবে, তাই আমরা এই ব্যবস্থার অংশ হতে আগ্রহী।"
রুপিতে বাণিজ্য ব্যবস্থার বিষয়ে ব্যাংকাররা বলেন, প্রথমে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করবেন এবং দাম পাবেন রুপিতে। এটি ভারতের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে জমা করা হবে। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা তাদের অর্জিত রুপি থেকে আমদানি খরচ পরিশোধ করতে পারবেন। এতে করে ডলারকে রুপি বা টাকায় রূপান্তরের সময় যে ক্ষতি হতো, তা আর হবে না।
এই বাণিজ্য প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, "বর্তমানে বিশ্বে ১৮টি দেশ রুপিতে বাণিজ্য করে। যেহেতু আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ছে, আমরা অন্যান্য দেশে রপ্তানির মধ্যমে রুপিতে পেমেন্ট পেতে পারি, যা ভারত থেকে আমদানির খরচ মেটাতে সাহায্য করবে।"
এদিকে, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এখন পর্যন্ত প্রাণ গ্রুপের জন্য ১.১ মিলিয়ন রুপি মূল্যের প্রাণ টোস্ট এবং ১.৩ মিলিয়ন রুপি মূল্যের কাঁচামালের জন্য এলসি খুলেছে ও নিষ্পত্তি করেছে।
বাংলাদেশে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড অমিত কুমার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জুলাইয়ে আমরা নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যানবাহন আমদানি এবং অপরিশোধিত সয়া তেল রপ্তানির জন্য একটি এলসি খুলেছি। আমদানির জন্য ১৬.১ মিলিয়ন রুপি এবং রপ্তানির জন্য ১২.৪ মিলিয়ন রুপির মোট চারটি এলসি এ পর্যন্ত খোলা হয়েছে।"
এছাড়া, ওয়ালটন গ্রুপের অধীনে বাংলাদেশ ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি-এর জন্য আমদানি ও রপ্তানি এলসি খুলেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
ইবিএল-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন বলেন, "রুপিতে লেনদেন আমাদের ব্যাংকের জন্য কিছুটা নতুন অভিজ্ঞতা। এটি মাত্র শুরু হয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে আমদানি-রপ্তানি অল্প পরিমাণে হলেও ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়বে।"
রুপি দিয়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বর্তমানে, আমরা বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে থাকি। অর্থাৎ, আমাদের আমদানির ১৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে আমরা ২ বিলিয়ন ডলারের পেমেন্ট রুপিতে করতে পারবো।"
"ভারতের সাথে বাণিজ্য যদি ডলারে হতো, তাহলে যারা ভারতে আমাদের কাছ থেকে পণ্য কেনে তাদের পণ্যের দাম নির্ধারণে সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু রুপিতে ব্যণিজ্য হলে তাদের সেই সমস্যায় পড়তে হবে না। তারা রুপিতে কিনবেন এবং রুপিতে বিক্রি করবেন। ফলে দাম নির্ধারণ করা সহজ হবে," যোগ করেন তিনি।
অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার আরও বলেন, রুপিতে বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হলে দেশের রিজার্ভের ওপর থেকেও চাপ কমবে।