চলতি বছরের ছয় মাসে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় বেড়েছে ১৫২ কোটি টাকা
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে আগের ছয় মাসের তুলনায় ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্যখাতে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) ব্যয় বেড়েছে ১৫২ কোটি টাকা বা ২৩৮ শতাংশ। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলোর চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধিতে সামগ্রিকভাবে সিএসআর ব্যয় বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২১৬ কোটি টাকা। আগের বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, উল্লেখিত সময়ে ব্যাংকগুলোর ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তার রোধে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী বিতরণের কারণে স্বাস্থ্যখাতে সিএসআর ব্যয় বেড়েছে।
তারা আরও বলেন, এই সময়ে শিক্ষা ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে আগের সময়ের তুলনায় ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে।
যদিও চলতি বছরের প্রথম ছয়মাস (জানুয়ারি-জুন) সময়ে ব্যাংকগুলো ওভারঅল সিএসআর খাতে মোট ব্যয় করেছে ৫৭১ কোটি টাকা, যা আগের ছয় মাসের তুলনায় ১১.৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সময়ে সিএসআর খাতে মোট ব্যয় ছিল ৫১৩ কোটি টাকা।
রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি বছরের এই ছয় মাসে মোট সিএসআর ব্যয়ের শিক্ষায় ১৫.৭৯%, স্বাস্থ্যখাতে ৩৭.৯৩%, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ৮.৭৩% ও অন্যান্য খাতে ৩৭.৫৬% টাকা বিতরণ হয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, চলতি বছরের ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয় স্বাস্থ্যখাতে বাড়ার কারণ হলো এই সময়টায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এছাড়া অনেক ব্যাংকের নিট প্রফিট বেশি হওয়ায় তার সবখাতেই সিএসআর ব্যয় করতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে শিক্ষা বৃত্তি চালু করেছে। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন যানবাহন কিনে দিয়েছে, যার কারণে শিক্ষায় ব্যয়ও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তাদের কর পরবর্তী নিট মুনাফার ১% সিএসআর খাতে ব্যয় করতে পারবে। এরমধ্যে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, সিএসআর খরচের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ২০ শতাংশ পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচ করতে হবে।
বাকি অর্থ আয় উপযোগী উদ্যোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলাধুলা ও বিনোদন খাতে খরচ করা যাবে। এর বাইরে ব্যাংকগুলো চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রণালয়ের তহবিলে সিএসআরের অর্থ দিতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের এই ছয় মাসে সিএসআর খাতে সবচেয়ে বেশি ৬১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। তারা শিক্ষায় ২৩ কোটি ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করেছে ২৯ কোটি টাকা।
এরপরের অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। তারা ২৫ কোটি স্বাস্থ্য খাতে ও ১১ কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করেছে।
এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক মোট বিতরণ করেছে ৪২ কোটি টাকা। তাদের ২৪ কোটি টাকা স্বাস্থ্য ও ১০ কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করেছে।
যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৫টি ব্যাংকের সিএসআর খাতে বিতরণ ৪ কোটি টাকা। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা নেগেটিভ থাকায় এই খাতে ব্যয় করতে পারেনি।
অন্যদিকে এই রিপোর্টে দেখা যায়, দেশে ৩৫টি নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন চলতি বছরের ছয় মাসে মাত্র ৩.৪৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের ছয় মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা কম।
প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মোট ব্যয়ের ৪৪% শিক্ষাখাতে ও ৩৫% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করেছে। এরমধ্যে লংকা বাংলা ও আইডিএলসি ১ কোটির কিছুটা বেশি করে সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে।