ছয় মাসেও পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি চূড়ান্ত হয়নি
মজুরি বোর্ড গঠনের পর প্রায় ৬ মাস পার হতে চললেও, এর মধ্যে মাত্র দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় সভায় শ্রমিক ও কারখানা মালিক পক্ষের প্রতিনিধি স্ব স্ব পক্ষের মজুরির প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও তা হয়নি।
সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট সভায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
ওই সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ রবিবার (১ অক্টোবর)। কিন্তু এই সভায়ও মালিকপক্ষ তাদের প্রস্তাব জমা দিচ্ছেন না। শ্রমিকপক্ষও প্রস্তাব জমা দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায়।
অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী, মজুরি বোর্ড গঠনের ৬ মাসের মধ্যে মজুরি চূড়ান্ত করার শর্ত রয়েছে।
পোশাকখাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "আমরা রবিবার প্রস্তাব জমা দিচ্ছি না। কারণ আমাদের পর্যালোচনা এখনো শেষ হয়নি।"
তিনি বলেন, "অনেক কারখানায় ওয়ার্ক অর্ডার নেই। বিদেশেও ঘুরে দেখেছি, সেখানেও অবস্থা ভালো নয়। আমরা আরো অপেক্ষা করি, দেখি পরিস্থিতির উন্নতি হয় কিনা।"
তবে এ মাসেই প্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, "মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিলে আমরাও দেব।"
মালিকপক্ষ প্রস্তাব না দিলে শ্রমিকপক্ষ থেকে দেওয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি 'নিশ্চিত নয়' বলে জানান।
শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা এটিকে 'কৌশল' বলে মনে করছেন।
ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম রাজু বলেন, "এতদিন অপেক্ষা করার পরও প্রস্তাব না দেওয়া হলে তা হবে এই কার্যক্রমকে বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া। শেষের দিকে হয়তো যেনতেন একটা মজুরি ঘোষণা করবে শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে অন্ধকারে রেখে। এটাই তাদের মূল কৌশল।"
তিনি বলেন, "বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠনের দাবি হলো মিনিমাম ওয়েজ ২৩ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। যদি এর চেয়ে কম মজুরি ঘোষণা করে, তাহলে আন্দোলন হবে। এটা যাতে না করতে পারে, সেজন্য হয়তো এ কৌশল নেওয়া হচ্ছে।"
গত ৯ এপ্রিল সরকার এ খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে; আগামী ৯ অক্টোবর যার ৬ মাস পূর্ণ হচ্ছে।
ইতিমধ্যে সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের সভা শেষে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি চূড়ান্ত করা হবে।
আবার শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ টিবিএসকে বলেন, "শ্রম আইন অনুযায়ী বোর্ড গঠনের ৬ মাসের মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন মজুরি সুপারিশ করবে বোর্ড। তবে বিশেষ প্রয়োজনে তা করতে ব্যর্থ হলে, মন্ত্রণালয় ফের সময় বাড়াতে পারে।"
বর্তমানে দেশে পোশাক শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা, যা ২০১৮ সালের শেষ দিকে চূড়ান্ত করা হয়।
১৯৮৪ সালে ৫৬০ টাকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছিল। এ পর্যন্ত এ খাতের শ্রমিকদের মজুরি ছয়বার সংশোধিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) গত জানুয়ারিতে 'আরএমজি খাতের ন্যূনতম মজুরি: প্রস্তাবনা গণনা এবং যৌক্তিকতা' শিরোনামে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে ৯টি দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরির তুলনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম মজুরি বাংলাদেশে।
তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম ৭৫.৫০ ডলার। একই সময়ে চীনে ২৬২ ডলার, ভারতে ১২৮ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ১৩৭ ডলার, কম্বোডিয়ায় ১৯৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ ডলার, ফিলিপাইনে ২৪৪ ডলার, ভিয়েতনামে ১৬৮ ডলার ও তুরস্কে ৩০৭ ডলার।