আগস্টে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, রিজার্ভের ওপর বাড়ছে চাপ
বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধির কারণে আগস্ট মাসে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ ৫০০ মিলিয়ন ডলার কমেছে; ফলে চাপ বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের বেসরকারি খাতের নেওয়া স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ আট মাসের ব্যবধানে প্রায় ৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে।ডিসেম্বরের শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "গত ৮ মাসে আমাদের ফরেক্স রিজার্ভের বড় পতন হয়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রাইভেট সেক্টরে শর্ট টার্ম ফরেইন লোন কমছে। এসব শর্ট টার্ম লোন নিয়ে আমদানি করা হতো।"
"বর্তমানে আমদানি কমে যাওয়ার কারণেও এসব লোনের চাহিদা কিছুটা কমছে। গত সেপ্টেম্বর মাসেও নতুন লোন পাওয়ার তুলনায় পেমেন্ট বেশি করার প্রবণতা দেখা গেছে," বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ আছে ২১.০৫ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট শেষেও এর পরিমাণ ২৩.০৯ বিলিয়ন ছিল। অর্থাৎ, এক মাসের মধ্যেই রিজার্ভ ২ বিলিয়ন কমেছে।
স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ কী কারণে কমছে জানতে চাইলে ব্যাংকাররা লোনের ডিমান্ড কমে যাওয়ার পেছনের তিনটি কারণকে সামনে নিয়ে আসেন।
প্রথমত, এই স্বল্পমেয়াদী ঋণের জন্য ৮.৫%-এর বেশি সুদ দিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বিদেশি ঋণে সর্বোচ্চ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) সাথে ৩.৫% সুদ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এসওএফআর এখন ৫% এর বেশি। ২০২০ সালে এটি ১% এর কম ছিল। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার কয়েক গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশি ঋণগ্রহীতাদের নতুন ঋণ নিতে খুব একটা আগ্রহী না হওয়ার এটাই অন্যতম কারণ। তারা আগে পুরোনো ঋণ শোধ করতে চায়।
দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক ঋণের ইন্টারেস্টের উপর ২০% ট্যাক্স দিতে হয়। এমনিতেই লোনের ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে গেছে। ট্যাক্সের কারণে অতিরিক্ত ১.৭% যোগ হয়ে নেট ইন্টারেস্ট ১০.২% এর বেশি হয়ে যায়। এত বেশি ইন্টারেস্ট পেমেন্ট করে লোন নিতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী নন।
তৃতীয়ত কারণ, ক্রমাগত টাকার অবমূল্যায়ণ। গত এক বছরে টাকার মান প্রায় ১৩% কমে গেছে। ফলে যারা ১বছর আগে ঋণ নিয়েছিলেন, তাদের ইন্টারেস্ট ছাড়াও টাকার মান কমার কারণে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে ডলার সংকট চলছে, ফলে টাকার মান সামনে আরো কমতে পারে। সবমিলিয়ে ব্যবসায়ীদের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় লোন নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুধু ঋণের চাহিদা নয়, ঋণ আগের মতো পাওয়াও যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমাদের ক্রেডিট রেটিং আগের তুলনায় খারাপ করে দেওয়ায় অনেক বিদেশি ব্যাংক এখন আগের মতো আমাদের লোন দিতে চাচ্ছে না। ফলে নতুন লোন ডিসবার্স কম হচ্ছে, সে তুলনায় আমাদের ডিউ পেমেন্ট করতে হচ্ছে বেশি।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্বল্পমেয়াদী ঋণ পাওয়া গেছে আগস্ট মাসে। পুরো মাসে নতুন ঋণ পাওয়া গেছে ১.৮৫ বিলিয়ন ডলারের। এরচেয়ে কম ১.৮৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ এসেছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
এর বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুদসহ আগস্ট মাসে ২.৪২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নতুন ঋণ পাওয়া গেছে ১৭.৮২ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২১.৭৯ বিলিয়ন ডলার।