বাজার স্থিতিশীল করতে কমতে পারে চিনি আমদানির শুল্ক
চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আমদানিতে বিদ্যমান রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) কমতে পারে। বর্তমানে চিনি আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ, যা ১০ শতাংশ কমতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রেগুলেটরি ডিউটি ছাড়াও একাধিক প্রস্তাব সম্বলিত সারাংশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যে প্রস্তাব অনুমোদন হবে, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অনুমোদন পেলে চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসতে পারে।
এনবিআরের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ভোক্তারা। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, "শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে পেতে হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় এ সুবিধা ভোক্তার কাছে যায় না।"
তিনি বলেন, "দাম কমালে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, তাদের বেশি দামে কেনা। যখন কম দামের পণ্য আসবে, তখন কম দামে বিক্রি করবেন। কিন্তু যখন বেড়ে যায়, সাথে সাথেই তারা বাড়িয়ে দেন।"
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চিনির দাম বিশ্ববাজারে কমতির দিকে থাকলেও ভোক্তা পর্যায়ে এ সুবিধা আসেনি, বরং তা কোম্পানিগুলোর পকেটে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত মে মাসে প্রতি কেজি চিনির দাম এক লাফে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়; যদিও বাজারে তার চেয়েও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের আওতাধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২১ অক্টোবর) প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকা দামে। বাজার যাচাই করেও এর সত্যতা মিলে।
বর্তমানে আমদানিকারকদের ১৫% ভ্যাট, ৩০% রেগুলেটরি ডিউটি এবং ২% অগ্রিম আয়কর ছাড়াও প্রতিটন চিনিতে নির্দিষ্ট ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়।
গত মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চিনি আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হলেও এর পর ওই সুবিধার মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি।
আমদানিকারকরা বলছেন, সবমিলিয়ে প্রতি কেজি চিনি ভোক্তার হাতে পৌঁছা পর্যন্ত টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্স (টিটিআই) প্রায় ৬৫%, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪২ টাকা।
অবশ্য শুল্ক যদি কমানো হয়, তাতে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে কতটুকু দাম কমবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম সুগার রিফাইনার সিটি গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এক মাস আগেও বিশ্ববাজারে প্রতি মেট্রিক টন চিনির দাম ছিলো ৬২০ মার্কিন ডলার, যা এখন বেড়ে ৬৭০ ডলার।
বর্তমানে পাঁচটি কোম্পানি- সিটি গ্রুপ, মেঘনা সুগার রিফাইনারস, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, আবদুল মোনেম সুগার এবং দেশবন্ধু সুগার মিলস- বাংলাদেশে চিনি পরিশোধন ও বাজারজাত করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, তাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৩৯ লাখ টন।
বাজারে চিনির চাহিদা বছরে ২০-২২ লাখ টন, যার ৯৭% আমদানি করা হয় এবং ৩% স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৫% চিনি প্যাকেটে এবং বাকিটা বাল্ক আকারে বিক্রি হয়।