কর্পোরেট করহার ২০ শতাংশ কমালে এফডিআই বাড়তে পারে ১৪গুণ: ফিকি প্রতিবেদন
কর্পোরেট করহার ২০ শতাংশ কমালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বর্তমানের তুলনায় ১৪গুণ বাড়তে পারে। অন্যদিকে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়নে কাস্টমস শুল্ক বাড়তে পারে ৩০ শতাংশ।
রোববার (১৯ নভেম্বর) ফরেইন ইনভেস্টরস চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র (এফআইসিসিআই বা ফিকি) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপনের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রথমে এসব তথ্য জানানো হয়। এরপর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অভ বাংলাদেশ (পিআরআই) একটি অনুষ্ঠানেও এ পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফিকির 'ক্যাটালাইজিং গ্রেটার এফডিআই ফর ভিশন ২০৪১: প্রায়োরিটিজ ফর বিল্ডিং আ কনডিউসিভ ট্যাক্স সিস্টেম ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, দেশে বিদ্যমান কর্পোরেট করহার কমালে তা বিনিয়োগ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে এবং এর কারণে রাজস্ব আদায় কমবে না, বরং বাড়বে।
তারা জানান, শুল্কহার কমালে উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী বাইরে থেকে কাঁচামাল বা উপাদান আনতে চায়, তাদের আমদানি ব্যয় কমবে। এ ব্যয় কমলে দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি কোম্পানির সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য দেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগ আরও প্রসারিত হবে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে করহার রয়েছে, তা ২০৩০ সাল নাগাদ ২০ শতাংশ কমিয়ে গড়ে ২৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে ২০৪১ সালে এফডিআই বর্তমানের তুলনায় ১৪গুণ বাড়তে পারে। একই সময়ে রাজস্ব আদায়ও বর্তমানের তুলনায় ৬গুণের বেশি বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, এই করহার যদি বর্তমানের তুলনায় আগামী ১০ বছরে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জিডিপি বাড়তে পারে মাত্র ৬গুণেরও কম, আর রাজস্ব আদায় বাড়তে পারে ৩গুণেরও কম।
একইভাবে বিনিয়োগবান্ধব কর পরিবেশ কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে এফডিআই ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়, তা-ও দেখানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে পরিষ্কার করা হয়েছে যে, করহার ও কর পরিবেশ দীর্ঘমেয়াদে এফডিআই ও কর আদায় বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ করহার বাড়ালে যে হারে এফডিআই ও রাজস্ব আদায় বাড়বে, করহার কমালে তা তারচেয়েও বেশি হারে বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে বর্তমানে করপোরেট করহার ২০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ। গত জাতীয় বাজেটের আগের তিন বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করহার ২.৫ শতাংশীয় পয়েন্ট করে কমানো হয়েছে।
ফিকির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্পোরেট আয়করের হার, কর প্রণোদনা ও অব্যাহতিসহ করনীতিগুলো একটি দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
এতে আরও বলা হয়েছে, কম করহার কর-পরবর্তী মুনাফা বাড়িয়ে বিদেশি ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে পারে, আর বিভিন্ন কর প্রণোদনা নির্দিষ্ট খাত বা অঞ্চলে এফডিআই প্রবাহকে আরও উৎসাহিত করতে পারে। অন্যদিকে উচ্চ করহার এবং জটিল কর ব্যবস্থা এফডিআইকে নিরুৎসাহিত করতে পারে—ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও অনুকূল গন্তব্য খোঁজে।
এছাড়া এফডিআই আকৃষ্ট করতে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, তা-ও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য দেশগুলোকে একটি সামগ্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। শুধু কর নীতি নয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো ও বাজার সম্ভাবনার মতো বিষয়গুলোরও সুরাহা করা উচিত দেশগুলোর।
করহার ছাড়াও বাংলাদেশে স্থানীয় ও এফডিআই আকর্ষণে আরও যেসব বাধা রয়েছে, তা-ও উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
ফিকির নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাংলাদেশে এফডিআই ও রাজস্ব আদায় বাড়ানো দরকার। এটি স্বল্পমেয়াদে চিন্তা না করে দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে বাড়তে পারে এবং তা কীভাবে টেকসই হবে, ফিকির প্রতিবেদনে সেটি উঠে এসেছে।'
'এটি বিবেচনা করা হলে তা এফডিআই ও রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে,' বলেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ টিবিএসকে বলেন, 'বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও রাজস্ব আদায় বাড়ানো—দুটিই প্রয়োজন। বিদ্যমান করহার কমিয়ে এবং অনুকূল পরিবেশে যে রাজস্ব আদায় বেশি হারে বাড়ানো সম্ভব, স্টাডিতে তা উঠে এসেছে।'