বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ
বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ।
রিকোভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (আরঅ্যান্ডআর) ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব ছিল, যা এখন বাড়িয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থছাড় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিপিসি কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, অর্থবিভাগের চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে ইআরডি। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
অর্থবিভাগের চিঠিতে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "এটা খুবই উৎসাহজনক বিষয় যে, দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসি-তে টার্গেট করা প্রায় সমস্ত সংস্কার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে। জাতীয় ট্যারিফ নীতি গ্রহণ, এ-চালান পদ্ধতির বাস্তবায়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা, সুরক্ষিত লেনদেন আইন প্রণয়ন এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ- এরমধ্যে কয়েকটি।
"দেশকে টেকসই উন্নয়নের ধারায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ এসব সংস্কার। দ্বিতীয় ডিপিসি-তে টার্গেট করা সংস্কারের মধ্যে মাত্র কয়েকটির কাজ সম্পন্ন হওয়া বাকি থাকলেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডিপিসি-তে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত সংস্কার পদক্ষেপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
"অর্থ বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় যে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছে বাংলাদেশ, এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি সাসটেইনেবল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
"সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই একটি স্থিতিস্থাপক ও টেকসই ভবিষ্যৎ; এবং এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল আলোচনা এবং অর্থছাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।"
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং রিজার্ভ সংকট মোকবেলায় বিশ্বব্যাংক ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এর সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলার করে মোট ৮০০ মিলিয়ন বাজেট সহায়তার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
চলতি মাসে দুই সংস্থার সঙ্গে এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।
কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক সংকট এবং টিকা কিনতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে থেকে বাজেট সহায়তার ওপর জোর দেয়। পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের বাজেট সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ হয়েছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেয়েছে ১.৭ বিলিয়ন ডলার। তার আগের তিন বছর যথাক্রমে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল ২.৫৯ বিলিয়ন, ১.০৯ বিলিয়ন এবং ১ বিলিয়ন ডলার।