ব্যাংকের নিট খেলাপি ৫ শতাংশের বেশি হলে ইন্স্যুরেন্স পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশে যেসব ব্যাংকের নিট খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি ও ক্যাপিটাল রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) ১২.৫ শতাংশের কম, তারা কোনো ইন্স্যুরেন্স বা বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) 'ব্যাংকাসুরেন্স' নিয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গাইডলানে ব্যাংকাসুরেন্স সেবার জন্য যোগ্যতা, চুক্তি, সংশোধন, নবায়ন এবং বাতিল পদ্ধতি ও কর্মকর্তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বীমাবিহীন ব্যক্তিদের বীমার আওতায় এনে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি ও তাদের কমিশনভিত্তিক আয় বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে ইন্স্যুরেন্স বা বীমা সেবা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গাইডলাইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তাদের শাখা ও ডিজিটাল মাধ্যমে এই সেবা বিক্রি করতে পারবে। তবে কোনো গ্রাহককে এই সেবা নিতে বাধ্য করতে পারবেন না।
দেশের ব্যাংকগুলো সেবা বিক্রির জন্য আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কর্তৃক এজেন্ট লাইসেন্স নিতে হবে।
ব্যাংকাসুরেন্স'র যোগ্যতা
দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে যাদের নিট খেলাপি ঋণ ও ন্যূনতম ক্যাপিটাল ছাড়াও ব্যাংকগুলোকে আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংককর্তৃক ক্রেডিট রেটিং ও ক্যামেলস গ্রেড ন্যূনতম ২ শতাংশ হতে হবে। এছাড়া, সর্বশেষ তিন বছরের নিট মুনাফায় থাকতে হবে।
ব্যাংকগুলোর অবশ্যই একটি কার্যকর ব্যাংকাসুরেন্স বিজনেস প্ল্যান এবং পর্যালোচনা প্রক্রিয়া থাকতে হবে, যা সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। একইসঙ্গে, ব্যাংকাসুরেন্স ইউনিট পরিচালনার জন্য ব্যাংকগুলোর যোগ্য ও উপযুক্ত জনবল থাকতে হবে।
ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাধারণ সুবিধাভোগী মালিকেরা ব্যাংকাসুরেন্সের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না।
ব্যাংকগুলোকে ইন্স্যুরেন্স সেবা বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তবে চুক্তির যেকোনো ধরনের সংশোধনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদ লাগবে।
প্রতি ৩ বছরে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চুক্তি পর্যালোচনা করবে।
যদি কোনো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে ব্যাংক চুক্তি বাতিল করে, তবে বিদ্যমান থাকা গ্রাহকের সেবা নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ করতে হবে।
বীমা সুবিধা গ্রহণকারী কোনো ধরনের ঝুঁকি নেবেন না। বীমা গ্রহক নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলে ব্যাংক গ্রাহককে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ক্রেডিট করে দেবে। গ্রাহকের যেকোনো অভিযোগ ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি সমাধান করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হতে আর্থিক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অধিকাংশ উন্নত দেশে ইন্স্যুরেন্স খাত খুবই শক্তিশালী। দেশের মানুষের অর্থিক নিরাপত্তা বিস্তারে সরকার ব্যাংকাসুরেন্স করেছে। এখন শুরুতে ভালো ব্যাংকগুলোকে এই ইন্স্যুরেন্স সেবা বিক্রির সুযোগ দিয়েছে।"
সামনে সময়ে সময়ে নীতিমালায় পরিবর্তন আসবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাসেল-৩ সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের খেলাপি নিট ঋণ ৫ শতাংশের বেশি প্রায় ১১টি ব্যাংকের। এছাড়া, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ক্যাপিটাল কম রয়েছে ১৭টি ব্যাংকে। অর্থাৎ, এই ব্যাংকগুলো গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যাংকাসুরেন্স পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।
বিআইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশে বীমার পরিধি বাড়াতে ব্যাঙ্কাসুরেন্স বড় ভূমিকা রেখেছে; বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হবে না।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে ১১,২০০টিরও বেশি ব্যাংক শাখা রয়েছে; তারা দেশে বীমার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।"
সুইস রি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বীমার অনুপ্রবেশ মাত্র ০.৪০ শতাংশ, যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই হার ৪ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন বলেন, "যদি বীমা কোম্পানিগুলো স্বচ্ছ হতো এবং তারা গ্রাহকদের দাবির নিষ্পত্তি করতে পারতো, গ্রাহকরা যদি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হতো– তাহলে ব্যাঙ্কাসুরেন্সের কোনো প্রয়োজনই হতো না।"
বাংলাদেশে ধারণাটি নতুন হলেও ইনভেস্টোপিডিয়া ডটকম থেকে জানা যায়, ১৯৭০ এর দশকে ফ্রান্সে শুরু হয়েছিল ব্যাঙ্কাসুরেন্স। এরপর থেকে এটি বেশিরভাগ দেশ, বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করে।