জুলাই-নভেম্বরে রাজস্ব আহরণে ১৪.২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আহরণে ১৪.২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগের অর্থবছরের একই সময়ের সংস্থাটির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩.২৫ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি পরিস্থিতি কিছুটা ধীরগতি হলেও নভেম্বরে স্থানীয় পর্যায়ে ভোগ বেড়েছে। পাশাপাশি নভেম্বরে আয়কর রিটার্ন দাখিল মাস পালিত হয়েছে। এ কারণে স্থানীয পর্যায়ে আহরিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং আয়কর আহরণ বেড়েছে।
এনবিআরের তথ্যমতে, জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ১.৩২ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আহরিত হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৩.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ এক লাখ ১৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকার রাজস্ব আহরিত হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের এই সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১.৪৮ লাখ কোটি টাকার বিপরীতে ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় আইএমএফের শর্ত পরিপালন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন সদস্য বলেন, সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজস্বে বড় প্রবৃদ্ধি বেশ কঠিন। বাস্তবতার চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা বেশি হওয়ায় ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। বছর শেষে ঘাটতি আরো বাড়বে। আইএমএফের বেধে দেওয়া লক্ষ্য অর্জনও কঠিন হবে।
আইএমএফের শর্তানুযায়ী চলতি অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। বছর শেষে এটি হতে হবে অন্তত ৪ লাখ কোটি টাকা। সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে অর্জিত হয়েছে ৩১ শতাংশ। যদিও সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রা ৪.৩০ লাখ কোটি টাকা।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলছেন, রাজস্ব আদায়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে। এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় একটু কম। ফলে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না। তবে অর্থবছরের শেষদিকে সাধারণত রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়ে। ফলে ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে।
রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত শুল্ক খাতে ৮.৮৪ শতাংশ, স্থানীয় পর্যায়ে পণ্য ও সেবা থেকে আহরিত ভ্যাট খাতে ১৬.৫০ শতাংশ এবং আয়কর খাতে ১৭.৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে আয়কর খাতে রাজস্ব আদায়ে ৪৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ভ্যাট খাতে ৫৬ হাজার ৭৫ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
আয়কর ও ভ্যাট খাতের তুলনায় কাস্টমস খাতে রাজস্ব আহরণে বেশি পিছিয়ে এনবিআর। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪৭ হাজার ২২২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এলসি জটিলতায় আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে শুল্ক আদায়ে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনের কারণে রাজস্ব আহরণ আরো কমবে বলে আশঙ্কা তাদের।
গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে অর্থনীতির গতি কম। এর সঙ্গে রয়েছে নির্বাচন। এতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।