চলতি অর্থবছরে ৮২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে সরকারের: সিপিডি
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের বাজেট ঘাটতি ৮২ হাজার কোটি টাকা হবে–- এ প্রক্ষেপণ দিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, "চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এখনও অর্জিত হয়নি। বাকি ছয় মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে, প্রায় ৫৪.৪ শতাংশ হারে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে, যা হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জি।" এতে দেশের রাজস্ব ঘাটতি ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৬.৩ শতাংশ, কিন্তু ডিসেম্বর নাগাদ প্রাপ্তি মাত্র ১৩.৯ শতাংশ।
সিপিডি আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে "জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: সিপিডির সুপারিশমালা" শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের অর্থনীতি এক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছে। বিশেষত মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করে সিপিডি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন একটা সময় বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও স্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যেটা আমরা দেখতে চাই বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেটা নেই বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটোই।
তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়ন হয় এক বছরের জন্য। বাজেটে যে নির্দেশনা থাকবে সেগুলো যেন চ্যালেঞ্জগুলো মেটাতে পদক্ষেপ নিতে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীলতা রাখা ও দরিদ্র মানুষের স্বার্থের দিকে নজর দিতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও কমেছে, গত বছর ২৭ শতাংশের মতো থাকলেও, এখন তা ২৫.৫ শতাংশে নেমেছে।
সিপিডির মতে, নীতিনির্ধারকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। বৈদেশিক মুদ্রার হারকে স্থিতিশীল করা, এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
সিপিডির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, অর্থপাচার রোধে এনবিআরের শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়া, অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করা, করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করা, ইএফডি যন্ত্র সহজলভ্য করা এবং ওষুধের ওপর ভ্যাট কমানো।
এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও আমদানি করা বই এসবে শুল্ক, ভ্যাট ও কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।