বাটা বাংলাদেশের বাজারে ৫০০ টাকার নিচে জুতা উৎপাদনের দিকে নজর দিয়েছে: সিইও
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা ও বাংলাদেশের বাজারে অবস্থান দৃঢ় করতে বাটা শু কোম্পানি একটি দ্বিমুখী কৌশল হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সন্দীপ কাটারিয়া।
প্রথম কৌশলটির বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাটার নজর এখন ৫০০ টাকার কম মূল্যের পণ্য উৎপাদনের দিকে। গ্রাহকদের কাছে তাদের বাজেটের মধ্যে বিপুল পণ্যের সমারোহ তুলে ধরাই এর উদ্দেশ্য।
কাটারিয়া বলেন, 'আমরা প্রায় এক হাজার নতুন আইটেম বাজারে ছেড়েছি। এগুলোর কোয়ালিটি ও ডিজাইনও ভিন্ন। যাতে গ্রাহক তার পছন্দসই পণ্যটি বেছে নিতে পারেন।'
বাংলাদেশ সফরকালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্দীপ কাটারিয়া তার প্রতিষ্ঠানের এসব কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
দ্বিতীয় কৌশলটির বিষয়ে তিনি জানান, কোয়ালিটি, প্রযুক্তি ও ডিজাইনের যে ধারা এখন বিশ্বে চলছে, সেটি সরাসরি বাংলাদেশি গ্রাহকদের কাছে নিয়ে আসা। যাতে করে পছন্দের পণ্য কিনতে তাদের আর দেশের বাইরে যেতে না হয়।
বাংলাদেশ বাটার বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বাজারের একটি বলে উল্লেখ করেন কাটারিয়া। তিনি বাংলাদেশকে ফুটওয়্যার শিল্পের জন্য একটি সম্ভাব্য বৈশ্বিক উৎস কেন্দ্র হিসেবে মনে করেন।
কাটারিয়া বলেন, 'বিশ্বব্যাপী আমাদের অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশকে গত কয়েক বছরের তুলনায় আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে দেখতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি দেশের জিডিপি ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমাদের জিডিপির চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া উচিত।'
বাংলাদেশে বাটার যাত্রা
স্বাধীনতার প্রায় এক দশক আগে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে বাটা।
সাক্ষাৎকারে কাটারিয়া বাংলাদেশের গ্রাহকদের বাটার সঙ্গে দীর্ঘ পথচলার কথা তুলে ধরেন।
স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'বাটা এ ধরনের প্রতিযোগিতা স্বাগত জানায়, যা আমাদের বাজারে আরও ভালো করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।'
কাটারিয়া জানান, তার প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে গ্রাহকদের সামনে কোয়ালিটিসম্পন্ন পণ্য তুলে ধরার মাধ্যমে সবসময়ই অন্যদের চেয়ে বাজারে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের বহুজাতিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মূল্য ও ডিজাইনের জুতা তৈরির মধ্য দিয়ে বর্তমান বৈশ্বিক ধারাকে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আর এসব জুতার উৎপাদন বাংলাদেশেই হচ্ছে।'
৮৫ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে তৈরি
বাটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, স্থানীয়ভাবে মোট পণ্যের ৮৫ শতাংশই প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের কারখানায় উৎপাদন করছে।
তিনি বলেন, 'কৌশলগতভাবে স্থানীয় উৎস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এর মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আরও কিছু অংশীদার প্রকৃতপক্ষে আমাদের উৎস অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।'
তিনি বলেন, ''বাটা সবসময়ই তার প্রযুক্তির উৎকর্ষের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়। আমরা সম্প্রতি আমাদের কারখানায় নতুন প্রযুক্তি চালু করেছি, বিশেষ করে 'ফ্লোটস' ব্র্যান্ডের যে জুতাগুলো দেখেছেন সেগুলোর জন্য।''
তিনি আরও বলেন, 'জুতা তৈরির কাঁচামালের প্রায় ৫০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা জুতাগুলো থেকেই আসে। আমাদের নিজস্ব কারখানাগুলোতে যখন ব্যবহারযোগ্য নয় এমন কোনো পণ্য থাকে, তখন সেগুলো ফেলে না দিয়ে আমরা পুনর্ব্যবহার করি। এটি একদিকে যেমন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে সহায়তা করছে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধবও।'
বাটার সিইও বলেন, 'আমরা আমাদের কারখানার ছাদে সৌরবিদ্যুৎ বসিয়েছি।'
সামনে এগিয়ে যেতে বাটা আরও নতুন নতুন পণ্য বাজারে আনার দিকে বেশি নজর দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।