আজ টিকফা বৈঠক: ফের যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে ঢাকা
আজ (২১ এপ্রিল) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) কাউন্সিলের বৈঠক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি বাংলাদেশি পোশাকের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে বাংলাদেশি ওষুধপণ্যের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্যও অনুরোধ করবে।
গত নভেম্বরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশ একই অনুরোধ জানালেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে সাড়া দেয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি বাড়াতে আগ্রহী। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে ডাবল ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিল করেছে।
এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিও অনেক বাড়ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর আগে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজার হিস্যা ছিল ৯ শতাংশ। ডাবল ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিল করার পর এখন তা বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা যুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলা ব্যবহার করে বাংলাদেশে উৎপাদিত আরএমজি পণ্যগুলোতে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেওয়া উচিত। তবে দেশটির বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের জন্য কোনো অনুরোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়লেও দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমছে। গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত অফিস অভ টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটিইএক্সএ) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-ফেব্রয়ারি দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.১৮ বিলিয়ন ডলার—যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯.২৪ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৩৯৫.৬৯ মিলিয়ন বর্গমিটার পোশাক আমদানি করেছে—যা ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পাঠানো ৪৫৩.৭৩ মিলিয়ন বর্গমিটারের চেয়ে প্রায় ১২.৭৯ শতাংশ কম।
টিকফা মিটিংয়ে যোগ দিতে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর (ইউএসটিআর) একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। আজ দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার ইস্যুকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। এজন্য শ্রম আইন সংশোধন করা, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন বাড়ানো এবং ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে জোর দেবে দেশটি।
২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধ্বসের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। আলোচনার ভিত্তিতে জিএসপি সুবিধা পুনঃবহালসহ দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ওই বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করে ঢাকা।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের এজেন্ডায় খসড়া তথ্য সুরক্ষা আইন, ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য খসড়া প্রবিধান এবং অন্যান্য ডিজিটাল ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বৈঠকে মার্কিন এজেন্ডায় শ্রম অধিকার-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ও আছে, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠনের স্বাধীনতা এবং যৌথ আলোচনা, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ, ইপিজেডে শ্রম অধিকার, শিশু শ্রম ও বলপূর্বক শ্রম।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র মেধাস্বত্ব অধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে।
অন্যদিকে মানসম্মত সার্টিফিকেশন অবকাঠামো নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রযুক্তিগত সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ।
২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনার ভিত্তিতে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালসহ দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ওই বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করে ঢাকা।