২০২৩ সাল শেষে ফুডপান্ডা বাংলাদেশের লোকসান ১,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশে ফুডপান্ডার ব্যবসাগুলো ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। ফুডপান্ডার জার্মানভিত্তিক মূল কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক বিবরণীতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অ্যাপভিত্তিক খাবার ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপান্ডা এবং তাদের অন-ডিমান্ড গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম পান্ডামার্টের মূল কোম্পানি ডেলিভারি হিরো জানিয়েছে, ২০২৩ সাল শেষে তাদের তিনটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬.২২ মিলিয়ন ইউরো, যা প্রায় ১ হাজার ১৩ কোটি টাকার সমান।
পুরো লোকসানের মধ্যে ফুডপান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড সবচেয়ে বেশি ৬৯.৫ মিলিয়নের ইউরো লোকসান দিয়েছে। ফুডপান্ডা বাংলাদেশ ২০১৬ সাল থেকে লোকসানে আছে।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসান করেছে পান্ডামার্ট পরিচালনাকারী ডেলিভারি হিরো স্টোরস (বাংলাদেশ) লিমিটেড। চার বছরে ডেলিভারি হিরো স্টোরস ১৫ মিলিয়ন ইউরোর বেশি লোকসান দিয়েছে। আর ক্লাউড কিচেন অপারেটর ডিএইচ কিচেনস (বাংলাদেশ) লিমিটেড এ চার বছরে মোট ১.৫৪ মিলিয়ন ইউরো নিট লোকসান করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফুডপান্ডার মূল কোম্পানি বেশি ব্যয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ না করে মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তার প্রতিফলন হিসেবে তিনটি কোম্পানিই গত বছর লোকসান কমাতে পেরেছে। তবে কোনো কোম্পানিই নিট মুনাফা করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে মন্তব্য চাওয়া হলে ফুডপান্ডা বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অফিস স্পেস ও কর্মী কমানোর মতো সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নিয়ে খাবার ডেলিভারি কোম্পানিটি ২০২৩ সালে তাদের বার্ষিক নিট লোকসান ১০.১৩ মিলিয়ন ইউরোতে নামিয়ে আনতে পেরেছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটি রেকর্ড ১৮.২৯ মিলিয়ন ইউরো নিট লোকসান দিয়েছিল।
ফুডপান্ডা ২০১৩ সালে বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক খাবার ডেলিভারি পরিষেবা চালু করে। ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ফুডপান্ডাকেও অধিগ্রহণ করে ডেলিভারি হিরো।
মহামারির আগে ও মহামারিকালে ব্যাপক বিপণন কার্যক্রম ও ছাড়ের সুবাদে ফুডপান্ডায় দৈনিক অর্ডার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মহামারির সময় ফুডপান্ডার দৈনিক ডেলিভারির পরিমাণ বেড়েছে। দৈনিক ১.৩ লাখেরও বেশি অর্ডার ডেলিভারি দিয়েছে কোম্পানিটি। একইসঙ্গে কোম্পানিটি বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় তাদের পরিষেবা প্রসারিত করেছে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। তার সঙ্গে বাজেট কমায় ভোক্তারা, পাশাপাশি কোম্পানিগুলো ভর্তুকিযুক্ত ব্যবসা সম্প্রসারণ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে খাবার ডেলিভারির বাজার মন্দার মুখে পড়ে গেছে।
উবার ইটস, আলিবাবা গ্রুপের হাংরি নাকি ও স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সহজ ফুডের মতো অন্যান্য খাবার ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলো তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে এবং লাভের মার্জিন না থাকার কারণে বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে।
ফুডপান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিতে বাজারে রয়ে গেছে শুধু পাঠাও।
শিল্পসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ অনলাইন খাবারের অর্ডার ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারে ফুডপান্ডা তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এছাড়া গত চার বছরে ফুডপান্ডা রাজধানীতে তাদের অন-ডিমান্ড গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম পান্ডামার্টের সম্প্রসারণ করেছে।