খোলাবাজারেও ডলারের দর ঠিক করে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির করিডোর মৌখিকভাবে ঠিক করে দেওয়ার পর এবার একইভাবে খোলাবাজারে ডলার বিক্রির দরও মৌখিক আদেশে ঠিক করে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন থেকে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ডলার বিক্রির রেটের সঙ্গে এক টাকা যোগ করতে পারবে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে তারা নগদ ডলার বিক্রি করছে গড়ে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা হারে। সে হিসেবে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো নগদ ডলার বিক্রি করতে পারবে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে। তবে মানি চেঞ্জারগুলোর ডলার কেনার দাম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১২ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের এক বৈঠকে এ দাম ঠিক করে দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহের বুধবার খোলাবাজারে নগদ ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ১১৭–১২০ টাকায়। বৃহস্পতিবার একদিনের ব্যবধানে ডলারের দাম সাত টাকা বেড়ে ১২৫-এ গিয়ে দাঁড়ায়। তার জেরে ডলারের দামের রাশ টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সভার পর রোববার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে একদিনে সাত টাকা বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রলিং পেগ প্রচলনের মাধ্যমে ডলারের অফিশিয়াল দাম সাত টাকা বাড়ানোর জের ধরে এমনটা ঘটেছে। তবে টাকার অবমূল্যায়নের পর যেখানে ব্যাংকে নগদ ডলারের দাম দুই টাকা বেড়েছে, সেখানে অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া যুক্তি গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সভা নিয়মিত 'ইন্টারঅ্যাকশন'-এর অংশ মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, 'আমরা ডলারের বাজার প্রায় ফ্রি করে দিতে চাইছি, তার মানে এ নয়, যে যেভাবে পারবে দাম বাড়িয়ে ডলার বিক্রি করবে। আমাদের যে ক্রলিং পেগের মাধ্যমে ডলারের মধ্যবর্তী দাম [১১৭ টাকা] নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট এবং কারেন্সি বাস্কেট বিবেচনায় নিয়েই করা হয়েছে।
'এর সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামে এত পার্থক্য হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। কারণ, ব্যাংকগুলোর হাতে এখন ৫১ মিলিয়নের বেশি নগদ ডলার আছে, যা একসময় আট মিলিয়নে নেমে গিয়েছিল। অর্থাৎ, আমাদের এখন নগদ ডলারের কোনো সংকট নেই, তাই অস্বাভাবিক দাম বাড়ারও কোনো কারণ নেই। আমরা মানি চেঞ্জারদের সরাসরি কোনো দর নির্ধারিত করে দিইনি, তবে তাদের সংযত হতে পরামর্শ দিয়েছি।'
মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের রেট দিচ্ছে ১১৭ টাকা। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা যুক্ত হয়ে গ্রাহকেরা ডলারপ্রতি প্রায় ১২০ টাকা দর পাচ্ছেন। সেখানে আমাদের নগদ ডলার বিক্রি করতে বলা হয়েছে সাড়ে ১১৮ টাকা করে। এটা কোনো দিক থেকেই যৌক্তিক হয়নি।' এভাবে রেট আটকে রাখলে টাকা পাচারের সম্ভাবনা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে অন্তত কয়েক লাখ মানুষ হজসহ নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবেন। তাদের একটা বড় অংশই পাসপোর্টে এনডোর্স করে সঙ্গে করে ডলার নিয়ে যান না বরং হুন্ডিতে লেনদেন করেন। এটা স্পষ্টতই মানি লন্ডারিং। এগুলো থামানো প্রয়োজন।
এনডোর্স ছাড়া ডলার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে সৌদি আরবে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যয়যোগ্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ নির্ধারণ করে বৈধ মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে এনডোর্স করিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএস জামান বলেন, 'আমরা সবসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে নগদ ডলারের রেট নির্ধারণ করতে বলেছে, আমরা সে অনুযায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের জানিয়ে দিয়েছি।'
মানি চেঞ্জারগুলোর ডলার এনডোর্স করার সীমা লিমিট এক হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার ডলার করার দাবি জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।