রেফারেল হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সরঞ্জামে ১০% শুল্ক আরোপ হতে পারে
রেফারেল হাসপাতালোতে ব্যবহৃত ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার, যা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জম আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এসব চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি অবশ্য বর্তমানে অন্যান্য শুল্ক ও ভ্যাট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত।
কর্মকর্তারা জানান, বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদানকারী রেফারেল হাসপাতালগুলো বর্তমানে এসব চিকিৎসা সামগ্রী কম শুল্কে আমদানি করলেও তাদের সেবার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থ চার্জ করে থাকে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নিয়োজিত থাকেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা।
কর্মকর্তারা আরও জানান, চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধি না করেই সরকার এই খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়েছে।
যদিও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পদক্ষেপ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য চিকিৎসাসেবা ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে দেবে; বিশেষ করে যারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরিবর্তে দেশেই শীর্ষ স্থানীয় হাসপাতালগুলো থেকে সেবা নিতে পছন্দ করেন। এ পদক্ষেপ দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো সম্প্রসারণে বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, এই সিদ্ধান্তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরেও চাপ পড়বে। কারণ দেশে চিকিৎসা খরচ বেড়ে গেলে অনেক রোগীই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করবেন।
তিনি বলেন, শুল্ক খরচ বাড়লে পরিষেবার খরচও বৃদ্ধি হবে।
ডা. এ এম শামীম আরও জানান, ল্যাবএইড হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ১৫০ ডলারে একটি এনজিওগ্রাম পরীক্ষা করা যায়, যেখানে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে একই পরীক্ষার খরচ প্রায় ৪৫০ ডলার।
এক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশিরা বিদেশে চিকিৎসার জন্য বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্ক বেড়ে যদি দেশে চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়, তাহলে বিদেশে চিকিৎসার এই ব্যয় বার্ষিক ১০ বিলিয়ন ডলারেও উন্নীত হতে পারে।
চিকিৎসা খাতের এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী নিউরোলজি ও কিডনি বিভাগে কিছু নতুন মেশিন বসিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানোরও পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি।
ডা. এ এম শামীম বলেন, সরকারের উচিত জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রীর পরিবর্তে বিলাসবহুল পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা।
রেফারেল হাসপাতাল হওয়া শর্ত
একটি হাসপাতালকে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সরকার নির্ধারিত এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে— হাসপাতালটি ন্যূনতম ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মোনো-ডিসিপ্লিনারি বা ন্যূনতম ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি হতে হবে।
হাসপাতালটিকে আন্তর্জাতিক মান পূরণ করে রোগীদের জন্য উচ্চ-মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতাও থাকতে হবে।
একইসঙ্গে, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনী এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকতে হবে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
অল্প শুল্কের সুবিধা পেতে এ ধরনের হাসপাতালগুলোকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পূর্বানুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়।
হাসপাতালের মোট রোগীদের মধ্যে ৫ শতাংশ- দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার শর্তে ২০০৫ সালে শূন্য শুল্কের সুবিধাটি চালু হয়েছিল। পরে বেশিরভাগ হাসপাতাল বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের শর্ত পূরণ না করায় ২০১৭ অর্থবছরে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করে সরকার।
বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালগুলো বিদেশ থেকে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে 'রেফারেল হাসপাতাল' হওয়ার সুবিধা ভোগ করছে।
দেশের প্রধান রেফারেল হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে— বারডেম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, অ্যাপোলো হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ, ইব্রাহিম ইকবাল মেমোরিয়াল হাসপাতাল, জালালাবাদ রাজিব-রাবেয়া মেডিকেল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, সালাউদ্দিন বিশেষায়িত হাসপাতাল, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতাল এবং ল্যাবএইড বিশেষায়িত হাসপাতাল।
এছাড়া গ্রীন লাইফ হসপিটাল, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, সুমনা হসপিটাল, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কেয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল, এমএইচ সমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং আসগর আলী হাসপাতালও এই তালিকায় রয়েছে।