২২ বাংলাদেশি রপ্তানিকারকের ২০ মিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধ করছে না অস্ট্রেলিয়ার মোজাইক ব্র্যান্ডস
প্রায় ২২টি বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকের পাওনা ১৯.৯৩ মিলিয়ন পরিশোধ করেনি অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাশন রিটেইলার মোজাইক ব্র্যান্ডস লিমিটেড। এতে সংকটে পড়েছে এই রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ইতিমধ্যে পাওনা আদায়ের জন্য ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে দুবার যোগাযোগ করেছে। এছাড়া শিগগিরই আরও একটি চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি। এ-সংক্রান্ত নথি টিবিএসের হাতে এসেছে।
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে মোজাইক ব্র্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। 'বিল অভ লেডিং' জমা দেওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানিকারকদের টাকা পরিশোধের চুক্তি রয়েছে ব্র্যান্ডটির সঙ্গে।
তবে আর্থিক সমস্যার কথা বলে ব্র্যান্ডটি পণ্য পাওয়ার পরও কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অর্থ পরিশোধ করছে না। তারা এখন রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চাইছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
গত ৬ অক্টোবর মোজাইক ব্র্যান্ডসের সঙ্গে কোনো পেমেন্ট-সংক্রান্ত সমস্যা বা ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ থাকলে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে বিজিএমইএ তার সদস্যদের অনুরোধ করেছে।
ফিডব্যাক পাওয়ার পর বিজিএমইএ বাংলাদেশ মিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করবে।
বিজিএমইএর তথ্যানুসারে, মোজাইকের কাছে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার পাওনা। এর মধ্যে ১৫.২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ইতিমধ্যেই রপ্তানি করা হয়েছে, আর ৪.৭২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানিকারকদের কাছে মজুত রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিগ বস কর্পোরেশন লিমিটেড, অ্যাকটিভ কম্পোজিট মিলস লিমিটেড, সাভার সোয়েটার্স লিমিটেড, পদ্মা স্যাটেল আরব ফ্যাশন লিমিটেড, সুলতানা সোয়েটার্স লিমিটেড, ওয়েসিস ফ্যাশন লিমিটেড, এফএনএফ ট্রেন্ড ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাব্রিকা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, এনআরএন নিটিং অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, স্মাগ সোয়েটার্স লিমিটেড, ভূঁইয়া ওয়ার্মটেক্স প্রাইভেট লিমিটেড, ফাইন সোয়েটার্স লিমিটেড, হেরা সোয়েটার্স লিমিটেড, হাইড্রোক্সাইড নিটওয়্যার লিমিটেড, মেগা ডেনিম লিমিটেড, মেনজ ফ্যাশন লিমিটেড, অ্যাসরোটেক্স গ্রুপ, রিয়াজ নিটওয়্যারস লিমিটেড, ইমপ্রেস নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলস লিমিটেড, প্রীতি সোয়েটার্স লিমিটেড, রায়ান নিট কম্পোজিট লিমিটেড ও অ্যাস্ট নিটওয়্যার লিমিটেড।
মোজাইক ব্র্যান্ডস লিমিটেডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে, কোম্পানিটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহৎ ফ্যাশন রিটেইলার গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। আগে এর নাম ছিল ননি বি লিমিটেড। তাদের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে মিলার্স, রকম্যানস, ননি বি, রিভার্স, কেটিস, অটোগ্রাফ, ডব্লিউ লেন, ক্রসরোডস ও বিম। দেশজুড়ে মোজাইকের প্রায় ১ হাজার স্টোর রয়েছে।
রপ্তানিকারকরা টিবিএসকে বলেন, ২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি রকম্যানস, অটোগ্রাফ, ক্রসরোডস, ডব্লিউ লেন ও বেমে ব্র্যান্ডগুলো বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তবে মিলার্স, ননি বি, রিভার্স ও কেটিস চালু থাকবে।
তবে কোম্পানিটি ব্ল্যাক ফ্রাইডে পর্যন্ত বন্ধ হতে যাওয়া ব্র্যান্ডগুলো থেকে পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বলেও জানান তারা।
পদ্মা স্যাটেল আরব ফ্যাশনস লিমিটেডের পরিচালক জাবেদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'গত দুই বছর ধরে আমরা এই ক্রেতার (মোজাইক) সঙ্গে ব্যবসা করছি। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি করা পণ্যের পেমেন্ট জুনে পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনও সেই পেমেন্ট পাইনি। এ কারণে আমরা তাদের কাছে পণ্যের চালান পাঠানো কমিয়ে দিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আর্থিক সংকটের কারণে মোজাইক পেমেন্ট দিতে আরও সময় চেয়েছে। তবে আমরা সেই অনুরোধ গ্রহণ করিনি।'
পণ্যের ১.৬৩ মিলিয়ন ডলার ও ইনভেন্টরির ১.২০ মিলিয়ন ডলারসহ তারা অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাশন ব্র্যান্ডটির কাছে মোট প্রায় ২.৮৪ মিলিয়ন ডলার পাওনা বলে জানান জাবেদ।
এদিকে বিগ বস কর্পোরেশন লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'আমরা মোজাইকের সঙ্গে গত ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কিন্তু তাদের ক্রেডিট রেটিং কমতে থাকায় গত দুই মাস ধরে কিছু পেমেন্ট দিতে দেরি হচ্ছে। ব্র্যান্ডটির কাছে এখন আমরা প্রায় ৩.০৯ মিলিয়ন ডলার পাওনা।'
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ক্রেতা যদি পেমেন্ট দিতে বিলম্ব করে, তবে রপ্তানিকারকরা ব্যবসা পরিচালনায় সমস্যায় পড়তে পারেন। ক্রেতার ক্রেডিট রেটিং সম্পর্কে সতর্ক থাকতে রপ্তানিকারকদের পরামর্শ দেন তিনি।