আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পিত ১০০ নয়, ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ করবে অন্তর্বর্তী সরকার
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়, বরং ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ করার পরিকল্পনা করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর মধ্যে প্রথম দফায় ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পুরোপুরি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ ও রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর বাকি চারটি নিয়ে কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)
এই ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে: জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চল, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কুড়িগ্রামে ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
৭ জানুয়ারি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়গুলো প্রকাশ করবেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে নিশ্চিত করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চৌধুরী আশিক মাহমুদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। তাকে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদ ক্ষমতায় আসার এক বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে ১০০টি সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে। তারপর থেকে বেজা এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ করছে।
কর্মকর্তারা জানান, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বেজা অন্য যেসব অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ করেছে, সেগুলো আপাতত ওই অবস্থাতেই থাকবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল আদৌ স্থাপন করা হবে কি না, সে বিষয়ে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার ইকোনমিক জোন স্থাপনের নামে সারা দেশে হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে ফেলে রাখছে, যার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।'
যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল অগ্রাধিকার পাবে; গুরুত্ব দেওয়া হবে না যেগুলোকে
প্রথম পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন সম্পন্ন করবে, তার মধ্যে রয়েছে—জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চল।
এর মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে।
শ্রীহট্ট, জামালপুর, জাপানি ও জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে আংশিকভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এই চারটিসহ প্রথম পর্যায়ের ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পুরোপুরি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেওয়া এবং রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পন্ন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রথম ধাপে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে বেজা। এ ধাপে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কুড়িগ্রামে ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ১০টি ইকোনমিক জোনে কবে নাগাদ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেওয়া হবে, তার একটি রোডম্যাপ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরবেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। এসব জোনে কী পরিমাণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান হবে, তার প্রাক্কলনও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হবে বলে জানান বেজার কর্মকর্তারা।
বেজার একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, নির্ধারিত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের বাইরে সিরাজগঞ্জসহ দেশের আরও বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে যেসব কার্যক্রম চলমান রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেগুলোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। অন্যান্য পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ভাগ্য নির্ধারণ করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ডিসেম্বরে বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ হওয়ার পর ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন।
মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও নেবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার। বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হবে না বলে নির্দেশনা পেয়েছে বেজা।
বেজার একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট-এর (এলওসি) আওতায় মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছিল। ২০১৫ সালে এই প্রকল্পের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হলেও এখন পর্যন্ত ৫ মিলিয়ন ডলারও ছাড় হয়নি। ভারতীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ বাস্তবায়নের শর্ত থাকলেও ভারতীয় কোম্পানিগুলো এতে অংশগ্রহণ করছে না। ফলে এই প্রকল্পের অগ্রগতি সামান্য।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে এসব অসুবিধার কথা তুলে ধরে প্রকল্পটি নিয়ে বেজার করণীয় সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বেজার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে না। তবে এটি বাতিলও করা হবে না। প্রতিবেশী দেশটির অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেবে না।'
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারিভাবে ৬৮টি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ২৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ মোট ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেয় বেজা। সরকারি, বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) এবং সরকারি পর্যায়-সহ (জিটুজি) ছয় ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে।