বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে না বেজা: নির্বাহী চেয়ারম্যান
সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হলেও, বেসরকারি অঞ্চলের জন্য তেমন কোনো পরিকল্পনা করেনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নতুন প্রশাসন।
বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এটিকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অঞ্চলে অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।
এ বিষয়ে বেজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারখানাগুলোর জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এসব কারখানার সেবার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে সুপারিশ করা হবে।
ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মাল্টিপারপাস হলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
প্রশ্নের জবাবে আশিক মাহমুদ আরও বলেন, বেসরকারি অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে।
তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এই সমস্যার সমাধানে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হবে এবং সেবার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
পূর্ববর্তী সরকার স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে দেশের নানা স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয় এবং এই পরিকল্পনায় সহায়তার জন্য বেসরকারি খাতও এগিয়ে আসে।
বেজার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৩টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদিত হয়েছে, যার মধ্যে আটটিতে কার্যক্রম রয়েছে এবং সেখানে কারখানাগুলোতে উৎপাদন হচ্ছে। তবে, অনেক কারখানা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না, যদিও ইতোমধ্যেই শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, "অবশ্যই বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। । যখন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় তখন তাদের কাছে ওয়াদা করা হয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলের দোরগোড়ায় গ্যাস, বিদ্যুৎ দেয়া হবে। হয়ত এটা কাগজে লেখা থাকে না, কিন্তু ওয়াদা করা হয়।"
তিনি আরও বলেন, "তবে, বেজা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। এর পরিবর্তে, আমরা তাদের হয়ে এডভোকেসি করবো।"
আশিক মাহমুদ বলেন, "আমরা একটি রোডম্যাপ তৈরি করব, যেখানে ভবিষ্যতে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কবে হবে, তা উল্লেখ থাকবে।"
সম্প্রতি বেজা ঘোষণা করেছে, তারা আগামী দুই বছরের মধ্যে মীরসরাইসহ পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। এর মধ্যে চারটি সরকার পরিচালিত অঞ্চল এবং একটি সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, তারা কয়েকটি সমস্যার কথা উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে– গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের অভাব, সড়ক সংযোগের অনুপযুক্ততা এবং কারখানাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পানি না থাকা।
বিনিয়োগকারীরা সেবার মানের দুর্বলতা এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এসব বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে আশিক মাহমুদ বলেন, "আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করছি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি।"
বেজার আওতায় আনা হবে কেইপিজেড
কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) শিগগিরই বেজার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ।
তিনি বলেন, "কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। আমরা বর্তমানে আইনগত দিকগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, তাদের জন্য আরও ভালো সেবা নিশ্চিত করা।"
এর আগে, ২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে কেইপিজেড-এর পরিচালনা পরিষদ জমি নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার এবং বন্ড লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যাতে এই শিল্প পার্কটি বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
কমিটি একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কেইপিজেড-এর কর্তৃত্ব বণ্টন করা হবে এবং সেবা দ্রুততর করতে কেইপিজেড-কে প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি প্রশাসন থেকে বেজার অধীনে নেওয়া হবে।
বেজার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং সিটি গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা পবন চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কেইপিজেড-কে বেজার আওতায় আনা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, "বেসরকারি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৬ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়, যার ফলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় দেশের প্রথম বেসরকারি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কেইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অগ্রগতি প্রত্যাশিত পরিমাণে হয়নি।"
প্রায় ২,৪০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত কেইপিজেড-কে রপ্তানিভিত্তিক শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।
পবন চৌধুরী আরও বলেন, জমি মিউটেশন সম্পর্কিত সমাধানহীন বিষয়গুলোর জন্য অনেক দেরি হয়েছে, যেগুলো আগে সমাধান করা যেত।
বর্তমান সরকারে এসব সমস্যা অবশেষে সমাধান করায় উন্নয়নের পথ খুলে গেছে উল্লেখ করে তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
স্থায়ী অগ্রগতির জন্য নীতির ধারাবাহিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, "যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে কেইপিজেড ভিয়েতনামের মতো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা অনেক ভালো প্রকল্প শুরু করি। কিন্তু যথাযথ সমর্থন ও ধারাবাহিক নীতি সহায়তা প্রদান করতে ব্যর্থ হই।"