জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এফডিআই প্রবাহ ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে ১০৪ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এ হ্রাসের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে নেট এফডিআই প্রবাহ ছিল ৩৬১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এ বছর তা ৭১ শতাংশ কমেছে।
২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এফডিআই-এর তথ্য প্রকাশ করে আসছে। এর মধ্যে, ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নেট এফডিআই প্রবাহ ছিল সর্বনিম্ন। ২০১৩ সালের আগের তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে না থাকায় সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল না। এছাড়া, বিভিন্ন কারখানায় একাধিক বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এ সময়ে এফডিআই বাড়ার আশা করা বাস্তবসম্মত ছিল না।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে নীতিমালায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীল সরকারের অধীনে নীতিমালা কীভাবে বদলাবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। এটাই এফডিআই কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জুলাই মাসে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি রেটিং আউটলুক স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে। তাদের মতে, দুর্বল তারল্য পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি ভবিষ্যৎ নীতিমালা নির্ধারণে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
এছাড়া, মে মাসে মুডি'স ইনভেস্টরস সার্ভিসও বাংলাদেশের রেটিং কমিয়েছে। যদিও তারা দেশের দীর্ঘমেয়াদি আউটলুক স্থিতিশীল রেখেছে, এতে বোঝা যায় যে অর্থনীতির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতায় বড় কোনো পরিবর্তন তারা আশা করছে না।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে নেট এফডিআই-এর ৭৩ মিলিয়ন ডলার এসেছে পুনঃবিনিয়োগকৃত আয় থেকে, যা মোট এফডিআই-এর ৭০ শতাংশ। এর অর্থ, দেশের এফডিআই প্রবাহের বড় অংশই আগের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমে এসেছে।
এছাড়া, ৭৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ইকুইটি মূলধন হিসেবে। অন্যদিকে, কোম্পানিগুলোর মধ্যে ঋণ ৪৫ মিলিয়ন ডলার কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, "বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপর রিটার্ন অনেক ভালো। তাই বিনিয়োগকারীরা তাদের আয় ফেরত পাঠানোর চেয়ে তা পুনরায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তবে ডলারের সংকটের কারণে অনেক সময় তারা আয় ফেরত আনতে সমস্যায় পড়েন, ফলে তারা বাধ্য হয়ে আয় পুনরায় বিনিয়োগ করেন।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছে টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে, যার পরিমাণ ৪৩৬ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত ২৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
এছাড়া, ওষুধ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পেট্রোলিয়াম এবং খাদ্য খাতও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ পেয়েছে।
এফডিআই বাড়াতে কী করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই আস্থা নেই। এমন অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে আস্থা অর্জন করবেন? তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।"