জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১২ শতাংশের বেশি বেড়েছে শিল্প ঋণ
মহামারির কারণে গেল বছর শিল্প খাতে বিনিয়োগ স্লথ গতিতে ছিল। এখন কোভিডের প্রভাব কমে আসায় পুরোদমে শুরু হয়েছেব্যবসা-বাণিজ্য। তাই চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিল্প ঋণ বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে মোট এক লাখ ৬ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। ২০২০ সালে একই সময় বিতরণের পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।
এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ খাতে মোট এক লাখ ৭ হাজার ২৪১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তথা তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ কমেছে ৬৪৪ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে আরো দেখা যায়, গত বছরের জুনে কোভিডের প্রভাব বেশি থাকায় শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ কম ছিল। তবে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন বিশেষ প্রণোদনার ঋণ প্রবাহ বাড়ায়, সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণও কিছুটা বেড়েছে।
মহামারিকালে বেসরকারি ঋণ প্রবাহ ছিল পড়তির মুখে, যা এখাতে তারল্য সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। সুদহার সীমারও চাপ তো ছিলই। এই অবস্থায় অক্টোবরে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়, যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরায়, বাড়তি চাহিদা ছিল যার প্রধান কারণ। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এরপর চলতি বছরের মে মাসে হয় সবচেয়ে কম বা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মোট তিন লাখ ৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪৪ হাজার ৩৫ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্পঋণ আদায় হয়েছে ৮২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে আদায় হয়েছিল ৮৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এবছর আদায় কমেছে ১.৮৯ শতাংশের বেশি।
এদিকে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক তথা জুন-সেপ্টেম্বরে মেয়াদি শিল্প ঋণ তথা বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র খাতে বিতরণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। যা গত মার্চ-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা বা ২৩.৬৬ শতাংশ কম।
এছাড়া চলতি মুলধন ঋণ বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র খাতে বিতরণ করা হয়েছে ৯১,৭৬২ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৮৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, মাহামারি পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ বাড়ছে। তাই শিল্প ঋণ বাড়াটা স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, কোভিড স্বাভাবিক হওয়ায় শিল্প কারখানাগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদন বাড়িয়েছে। ফলে দেশ-বিদেশের চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরা মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়িয়েছেন। তারা ব্যাংক থেকে অধিক পরিমাণে ঋণ নিচ্ছেন। ফলে দেশের মোট আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে তথা এলসির পরিমাণ বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি মূল্য পরিশোধ বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। এই ঘটনা দেশে এবং ইউরোপ ও আমেরিকার রপ্তানি বাজারে জমে থাকা ভোক্তা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে শিল্পখাতের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং আনুষাঙ্গিক পণ্য আমদানি বৃদ্ধির নির্দেশক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। যা গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।