প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে হবে এবারের বাণিজ্য মেলা
আগের বছরগুলোর তুলনায় অর্ধেকেরও কম স্টল ও প্যাভিলিয়ন নিয়ে নতুন ঠিকানায় ১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর পূর্বাচলে বসছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
কোভিড সংক্রমণের কারণে গত বছর মেলা হয়নি। এবারের মেলা রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিবর্তে পূর্বাচলে অবস্থিত স্থায়ী ভেন্যু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে হচ্ছে।
আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে মেলায় কমানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম। ২০২০ সালে ৪৮৩টি ছোট-বড় স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল। সে সংখ্যা কমিয়ে এবার করা হয়েছে ২২৫টি। এর মধ্যে বিদেশি ৬টি স্টল ও ৪টি মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
২০২০ সালের মেলায় মোট ২১টি দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছিল। তবে এবার করোনার কারনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ইরান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানের স্টল থাকবে বলে জানা গেছে ইপিবি সূত্রে।
মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিত মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও তুরস্ক অংশ নিচ্ছে মেলায়। এছাড়া দেশি এজেন্টের মাধ্যমে অনেক দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ব্রাজিল থেকে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু ওখানে করোনার প্রকোপ বাড়ায় তারা আসতে পারেনি।'
তিনি জানান, এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে মেলা সাজানো হয়েছে। মেলায় যেন অতিরিক্ত দাম না রাখা হয় সেই বিষয়টিও লক্ষ রাখা হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান প্রবেশ ফটক, স্টলসহ সব ধরনের কাজই চলমান ছিল। স্টল নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতরা বলেন, যে কাজ রয়েছে, তা মেলা উদ্বোধন হওয়ার আগেই শেষ হবে। তবে কিছু কিছু স্টলের নির্মাণকাজ বাকি থাকতে পারে।
এক নজরে এক্সিবিশন সেন্টার
বঙ্গবন্ধু-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মোট ফ্লোর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার। এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলিয়ে স্টল থাকবে। এতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবেন।
মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে গতবারের চেয়ে এবারের মেলায় দর্শনার্থী বেশী হবে। কারণ এটা স্থায়ী ভবন, তার ওপর খোলামেলা পরিবেশ। পাশে নদীও আছে। অনেকে মেলায় এসে ঘুরতেও পারবেন আশেপাশে।'
প্রবেশমূল্য ও সময়
মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবার প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।
মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'মেলার মূল লক্ষ্য বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা। করোনার কারণে হয়তো কম আসবে তারা। তবে মেলা শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিদেশি ক্রেতা আসতে থাকবে। উদ্যোক্তারা তাদের নতুন নতুন পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হবে।'
মেলায় যাতায়াতের ব্যবস্থা
এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকছে ৩০টি বিআরটিসি বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে বাসগুলো। এসব বাসে ন্যূনতম ২৫ টাকা ভাড়ায় দর্শনার্থীরা যাতায়াত করতে পারবেন।
ইপিবি সচিব জানান, ৩০টি বাসের পাশপাশি বিআরটিসির মতিঝিল থেকে যে বাস চলাচল করে সেগুলো কুড়িল হয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যাবে। তিনি বলেন, 'বিআরটিসি জানিয়েছে, এখানে ৫০টি বাস প্রয়োজন হলেও দেবে তারা। রাস্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা কেটে গেছে। পূর্বাচলের যাবার জন্য ১০ কিলোমিটার সড়ক ঠিক হয়ে গেছে।'
বাণিজ্য মেলার গেটের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। এবার গেটের থিমে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মেগাপ্রকল্পকে। এবারের মেলার প্রধান গেটে চারটি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। কর্ণফুলি টানেলের মতো গোল করা হয়েছে প্রবেশপথ। ওপরে সেতুবন্ধন হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা সেতুর প্রতীকী কাঠামো। রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মেট্রোরেলের প্রতীকী কাঠামোও থাকছে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তখন থেকেই দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্র্যান্ডকে পরিচিতি করার মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছেন বাণিজ্য মেলাকে। ক্রেতাদের মধ্যেও মেলায় যাওয়ার জন্য ব্যাপক উৎসাহ থাকে।
গতবারের (২০২০) ২৫তম মেলায় কত টাকার রপ্তানি আদেশ এসেছে সেটা জানাতে পারেনি ইপিবি। তবে তার আগের বছর বাণিজ্য মেলায় রপ্তানি আদেশ পাওয়া গিয়েছিল ২০০ কোটি টাকার। মেলায় দর্শক এসেছিলেন ৫০ লাখ।