ইন্টারেস্ট ইনকাম কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলোর মুনাফা হ্রাস
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তিনটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি বিপণন কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েলের মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর স্থায়ী আমানত থেকে কম সুদ আয়ের (ইন্টারেস্ট ইনকাম) কারণে মুনাফার এই পতন।
২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি তেল বিপণনে দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বার্ষিক মুনাফা হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ১২১% ও ৭৯%।
একমাত্র যমুনা অয়েলের বার্ষিক মুনাফা ২.৪৪% বৃদ্ধি পেয়েছে; এটি পাকিস্তান আমলে (১৯৬৪ সালে) চালু হওয়া দেশের প্রথম তেল কোম্পানি।
তবে মুনাফার এই উত্থান-পতন সত্ত্বেও, তিনটি কোম্পানিই আগের অর্থবছরের মতো ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্যও একই পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে এবং ইন্টারেস্ট ইনকাম থেকেই তারা মোট মুনাফার শতকরা ৮০-৯০ ভাগ লাভ করে থাকে।
২০২০ সালে, সরকার ঋণের হার ৯% এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাংক আমানতের হার ৬% পর্যন্ত বেধে দিয়েছিল।
এই পদক্ষেপের পর, ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের সুদের হার কমাতে শুরু করে। ফলে লোয়ার ইন্টারেস্ট ইনকাম তেল কোম্পানিগুলোর মুনাফায় প্রভাব ফেলছে।
পদ্মা অয়েলের মুনাফা কমেছে ১২১%
পদ্মা অয়েল কোম্পানি জ্বালানী সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করে।
এছাড়াও কোম্পানিটি পেট্রোলিয়াম পণ্য, লুব্রিকেন্টস ও গ্রিস, বিটুমিন, এলপিজি এবং কৃষি রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন ও বিপণন করে।
২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১২১ শতাংশ মুনাফা কমেছে। এই অর্থবছরে কোম্পানিটির নীট মুনাফা হয়েছে ২২৮.৫৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ২৭২.৯৮ কোটি টাকা।
তবে মুনাফা কমলেও ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। বিগত অর্থবছরেও কোম্পানিটি একই পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪ শতাংশ। আগের বছর প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ৬০.৫১ কোটি টাকা, তবে চলতি অর্থবছরে এই মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩.৬৯ কোটি টাকা।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মুনাফা কমেছে ৭৯%
২০২০-২১ অর্থবছরে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য বিপণনকারী মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মুনাফা কমেছে ৭৯ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে কোম্পানিটির নীট মুনাফা ছিল ২০৭.৯১ কোটি টাকা, তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮২.১৪ কোটি টাকা।
চলতি বছরে প্রথম প্রান্তিকেও কোম্পানিটির নীট মুনাফা কমেছে ৩.৮৯%। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটির নীট মুনাফা হয়েছে ৬৫.২৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৭০.৭৮ কোটি টাকা।
মূলত, সুদের হার কমানোর কারণে ফিক্সড ডিপোজিট থেকে আয় কমে যাওয়ায় বছর শেষে মুনাফা কমেছে বলে জানান কোম্পানি সেক্রেটারি রেজা মোঃ রিয়াজউদ্দিন।
তিনি বলেন, "ফুয়েল হ্যান্ডেলিং কমেনি, কাজেই এই খাত থেকে আয় মোটামুটি স্থিতিশীল। তবে ডিপোজিট থেকে আয় কমে যাওয়ায় মুনাফা হ্রাস পেয়েছে।"
বছর শেষে নীট মুনাফা কমলেও আগের বছরের মতো ১৫০% বা শেয়ার প্রতি ১৫ টাকা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।
যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ২.৪৪%
ফিক্সড ডিপোজিট থেকে আয় কমলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২.৪৪ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা অয়েল কোম্পানির।
তবে প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা ১.৯৫% কমে দাঁড়িয়েছে ৪০.৫৫ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৪৪.৯০ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির নীট মুনাফা হয়েছে ২০০.১৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ২০১.৪ কোটি টাকা।
আর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
যমুনা অয়েল কোম্পানির কোম্পানি সেক্রেটারি মোঃ মাসুদুল ইসলাম বলেন, "মুনাফা কমার মূল কারণ ইন্টারেস্ট ইনকাম কমে যাওয়া। মুনাফার বড় অংশ আসে ফিক্সড ডিপোজিট থেকে। তবে তা কমেছে, যার কারণে কোম্পানির মুনাফা প্রভাবিত হয়েছে।"