দেশীয় রেফ্রিজারেটরের দাপট এবারের বাণিজ্য মেলায়
হাইলাইটস:
- কোম্পানিভেদে মিলছে ৭-১০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট
- ১৪ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা দামের ফ্রিজ রয়েছে মেলায়
- ২০২০ সালে দেশে ২৬ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে
- দেশের রেফ্রিজারেটর বাজার বর্তমানে ৫৪৯ মিলিয়ন ডলারের
- ওয়ালটন, মিনিস্টার, স্যামসাং, কনকা, ভিশন, যমুনার স্টল রয়েছে মেলায়
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আকর্ষণীয় ডিজাইন ও ফিচারের বেশকিছু নতুন মডেলের ফ্রস্ট এবং নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ এনেছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্টরা।
মেলায় ফ্রিজ বিক্রি করা ৬টি স্টলের মধ্যে ৪টিই দেশীয় কোম্পানির। ক্রেতারা মূলত ভিড় করছেন দেশীয় ব্র্যান্ডের স্টলে।
ওয়ালটন, মিনিস্টার, স্যামসাং, কনকা, ভিশন, যমুনাসহ দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের স্টল ঘুরে দেখা গেছে ১৪ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের ফ্রিজ প্রদর্শন করছে কোম্পানিগুলো । প্রোডাক্টভেদে প্রি-বুকিংয়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্টও দিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। একটি কিনলে একটি ফ্রি অফারও দিচ্ছে কেউ কেউ।
বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, আইওটি-বেজড স্মার্ট ফ্রিজ এসেছে এবারের মেলায়। ডিজিটাল ডিসপ্লে, অ্যাডভান্স টেম্পারেচার কন্ট্রোল, টুইন কুলিং, ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার, ডোর ওপেনিং অ্যালার্ম, আয়োনাইজার, হিউম্যান ডিটেক্টর, স্পেশাল আইস মেকিং জোন, ময়েশ্চার কন্ট্রোল জোন, ন্যানো হেলথ কেয়ার, এন্টিফাংগাল ডোর গ্যাসকেট, বাহির থেকে ঠান্ডা পানি নেয়ার ব্যবস্থা সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে এসব ফ্রিজে।
তবে এখনও সেভাবে ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। বিক্রেতারা আশা করছেন এক সপ্তাহ পর জমে উঠবে মেলা।
রাজধানীর বনশ্রি থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের দাম বেশি তাই নতুন প্রযুক্তির দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনবো।"
তিনি আরও বলেন, "মেলায় সাধারণত নতুন প্রযুক্তির পণ্য নিয়ে হাজির হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে দেশি – বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ পাওয়া যায় তাই সুবিধা হয় যাচাই করতে।"
এবারের বাণিজ্য মেলায় ডিজিটাল ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ডাবল ডোরের ৬১৯ লিটারের একটি রেফ্রিজারেট এনেছে দেশিয় জায়ান্ট ওয়ালটন। ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এ ফ্রিজটি ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ছাড়াই চলে। টাচ স্কিনের মাধ্যমে টেম্পারেচার বাড়ানো-কমানো এমনকি বন্ধও করা যায়। এছাড়া ওয়ালটন অ্যাপের মাধ্যমেও যে কোন যায়গা থেকে এর টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ওয়ালটন এ ফ্রিজটির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
মেলায় কথা হয় ওয়ালটনের অতিরিক্ত পরিচালক গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) মো. প্রিন্স হোসেন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, "মেলাতে নতুন ৬ টি মডেলের আকর্ষণীয় ডিজাইনের ফ্রিজ এনেছি আমরা। সবগুলো মডেল ডিজিটাল কন্ট্রোল সিস্টেমে চলে। আমাদের ৬৫টির বেশি মডেলের ফ্রিজ রয়েছে।"
ওয়ালটনের সব ফ্রিজে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে। ফ্রিজের কম্প্রেশারে রয়েছে ১২ বছরের গ্যারান্টি।
মিনিস্টার এবার ছয়টি দরজা সম্পন্ন ৬০০-৬ডি মডেলের নতুন ফ্রিজ এনেছে মেলায়।
মিনিস্টারের সহকারী পরিচালক, বিক্রয় ও বিপণন এমডি সজিবুল ইসলাম বলেন, "মেলাতে আপকামিং কিছু ফ্রিজ আসছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আরও ৭ থেকে ১০টি মডেলের ফ্রিজ আসবে। ডিজিটাল ডিসপ্লে, ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারে এনার্জি সেভিং হবে। ফ্রিজটিতে স্মার্ট ইনভার্টার টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে।
মেলাতে মিনিস্টার ফ্রিজ ৭ শতাংশ ডিসকাউন্টে কেনা যাচ্ছে। ফ্রিজের কম্প্রেসারে ১২ বছরের গ্যারান্টি রয়েছে।
মেলায় ডাবল ডোরের দুটি মডেলের ফ্রিজ এনেছে ভিশন। এ ফ্রিজের দাম ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা।
ভিশন স্টলের বিক্রিয়কর্মী তুহিন বলেন, "২০টি মডেলের ফ্রিজ রয়েছে আমাদের। ১৪২ লিটারের ফ্রিজের দাম ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। ২৫০ লিটারের ডিপ ফ্রিজের দাম ৩১ হাজার ৯০০ টাকা, ১৫০ লিটার ডিপ ফ্রিজের দাম ২৪ হাজার ৮০০ টাকা।
ভিশন ফ্রিজে কম্প্রেসারে ১০ বছরের গ্যারান্টি রয়েছে ও অন্যন্য টেম্পার পার্সের ৪ বছর গ্যারান্টি।
স্যামসাং এর স্টলে ২১৮ লিটার ফ্রিজ ২৪ হাজার ৯০০টাকা ও ডাবল ডোর ৮৪৫ লিটারের ফ্রিজের দাম ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
স্যামসাং স্টলের বিক্রয়কর্মী প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, "মেলা উপলক্ষে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে ফ্রিজে।"
কনকা তাদের ফ্রিজে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। ১৫০ লিটারের ফ্রিজ ২৭ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৭৫০ লিটারের ফ্রিজ ৮৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিন দরজার নতুন কেআরএফ-৫৮০ মডেলের ফ্রিজ এনেছে তারা। এ স্টলে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে, ডিসকাউন্টের পরিবর্তে ক্রেতারা একটি কুপন নিতে পারেন। এই কুপনের মাধ্যমে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে একটি নতুন রেফ্রিজারেটর পর্যন্ত পুরস্কার রয়েছে ক্রেতাদের জন্য। কোম্পানির লাকি কুপন ড্রয়ের বিজয়ীদের সাথে পরে মেসেজে যোগাযোগ করবে কোম্পানি।
মেলায় যমুনার স্টলে ১৪৮ লিটারে ফ্রিজে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে দেশিয় কোম্পানিটি।
দেশি ব্র্যান্ডের দাপট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের গবেষণা উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ (এমডব্লিউবি) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে দেশের রেফ্রিজারেটর বাজার ৯০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালের পর দুই বছর সময়কালেই দেশের রেফ্রিজারেটর বাজার ১৩১ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫৪৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর এ বাজারের ৮০ শতাংশ দেশিয় প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকবে।
২০১০ সালের আগে দেশের রেফ্রিজারেটর বাজারের ৮০ শতাংশই ছিল বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে।