ঢাকা বাণিজ্য মেলায় এবার বিদেশি স্টলগুলোর মধ্যে ভারতের বেশি
রাজধানীতে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এই মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় পণ্যের স্টলের পাশাপাশি বিদেশি স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। আর বিদেশি স্টলগুলোর মধ্যে ভারতীয় স্টলই বেশি দেখা গেছে। গত আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তার কোনো প্রভাবই দেখা যাচ্ছে না মেলায়।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করেছে।
মেলার শুরুতে ইপিবি জানিয়েছে, এবার মেলায় বাংলাদেশ ব্যতীত আরও ৭টি দেশের মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সেই হিসেবে গত দুই বছরের চেয়ে এ বছর বাইরের দেশ কম অংশ নিয়েছে।
২০২৩ সালে ১২ দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। গত বছর ২০২৪ সালে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ ১৬ থেকে ১৮টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন ছিল বলে জানানো হয়েছিল মেলা আয়োজকের পক্ষ থেকে।
আর এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো— ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া। তবে ১১টি স্টলের বেশি স্টলে বিদেশি পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আমরা অফিসিয়ালি ৭টি দেশ থেকে ১১টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছি। মেলাতে যেটা হয়, আমার ধারণা, একজন স্টল বরাদ্দ নিল সে হয়তো অন্য কাউকে দিল; তিনি হয়তো বিদেশি পণ্য বিক্রি করছেন।"
প্রায় ৫০টি স্টলে ভারতীয় পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। এরমধ্যে মেলার মূল প্যাভিলিয়নে কাশ্মীরি শাল, জুতা, কসমেটিক্স, কাপড়, ও হস্তশিল্পসহ প্রায় ৩০টি স্টলে দেখা যায় ভারতীয় পণ্য বিক্রি করতে। এরমধ্যে আবার 'হল বি'তেই রয়েছে প্রায় ২০টি।
মেলায় আসা হাবিবুর রহমান বলেন, "মেলার মূল ভবন 'হল বি'তে ভারতীয় পণ্যের এতো বেশি স্টল আগে দেখিনি। মনে হয়, এ পার্টটিতে শুধু ভারতীয় পণ্যের মেলা হচ্ছে। এটা হওয়া উচিৎ না। আমাদের দেশি উদ্যেক্তাদের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।"
পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মেলা প্রাঙ্গণের স্টলগুলো 'হলো-এ' এবং 'হল-বি'— এ দুই ভাগে বিভক্ত। মূল ভবনের বাইরেও কিছু স্টল আছে। ভারতীয় স্টলগুলোয় মিলছে কাশ্মীরি শাল, ওয়ান–পিস, থ্রি–পিস, ফ্যাশনেবল পঞ্চ, মাফলার, কার্পেট।
হল-এ তে কাশ্মীরি চাদর বিক্রি করে এমন ভারতীয় একটি স্টলে কথা হয় বিক্রয় কর্মী শেখ মোহম্মদ হিরুর সঙ্গে। তিনি বলেন, "আমরা সরাসরি জম্মু-কাশ্মীর থেকে পণ্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা প্রতি বছরই মেলায় অংশ নিই।"
তিনি জানান, "কাশ্মীরি চাদরের দাম ১,৫০০ থেকে ৪,০০০ টাকা। আমাদের বিক্রি তেমন হচ্ছে না। শুক্রবার প্রায় ২ লাখ বিক্রি হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমরা ৫০ হাজারও বিক্রি করতে পারছিনা।"
এদিকে বাংলাদেশ ভারতের চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়েতে দেখা যায়নি বাণিজ্য মেলার ভারতীয় স্টলে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন।
মো: সাব্বির বলেন, "আমাদের যমুনা ফিউচার পার্কে দোকান আছে। আমরা জম্মু-কাশ্মীর থেকে চাদর আনি। দাম ১ থেকে ১০ হাজার টাকা।"
শুক্রবার বিকালে 'হল বি' তে কাশ্মীরি কার্পেট, ইন্ডিয়াল ওরিয়েন্টেড কার্পেট লেখা স্টল ঘুরে দেখা গেল, সেখানে কার্পেট কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীর। ক্রেতার চাপে বিক্রয় কর্মীরা কথা বলার সময় দিতে পারলেন না।
ভারতীয় ব্যাগ ও জুতার দোকানে ভালই ক্রেতা দেখা গেল। জুতার মধ্যে রয়েছে— নাগরা, জুত্তি, চপ্পল ও স্যান্ডে। রয়েছে বানজারা ব্যাগ ও মেটাল ব্যাগের দোকান। বম্বা ফুটওয়্যার স্টলে দেখা গেল বাহারি জুতা।
মেলায় প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই ডান পাশে রয়েছে দিল্লি অ্যালুমিনিয়াম প্রিমিয়াম স্টল। স্টিলের বাসনকোসন বিক্রি করছে দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামস। দোকানের ভেতরে ছিলো ক্রেতাদের ভিড়।
ভারতীয় পণ্য কেনা এক ক্রেতা বলেন, "প্রয়োজন দেখে পণ্য কিনি। কাশ্মীর চাদর বিখ্যাত, তাই চাদর কিনলাম। এখন শীতকাল, তাই শীতের পোশাক কিনেছি।"
মেলায় কথা হয় ইরানি কার্পেট বিক্রেতা মো: মুসার সঙ্গে। তিনি বলেন, "আমাদের পণ্যের মান ভালো, কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতারা দাম কম বলছেন। আমাদের বিক্রি ভালো না।"
"৩ ফুট বাই ৫ ফুট আয়তনের কার্পেটের দাম ২০,০০০ টাকা; আর ৫ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের কার্পেটের দাম ৯৫,০০০ টাকা," বলেন তিনি।
পাকিস্তানি কয়েকটি স্টলে চাদর ও বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করতে দেখা যায়। পাকিস্তান কাশ্মীর চাদর বিক্রি করছে এমন একটি স্টলে কথা হয় মোহম্মদ সাজ্জাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২,০০০-৫,০০০ টাকা দাম চাদরের। এ বছর বিক্রি কম। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মেলা থাকলে বেশি বিক্রি হয়।"
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার এবারের ২৯তম আসর চলবে পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে।