আইসিডির নিয়মবহির্ভূত চার্জে খরচ বাড়ছে ব্যবসায়: বিজিএমইএ
রপ্তানি পণ্যবাহী পরিবহন থেকে পণ্য বন্দরে বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর (আইসিডি) ওয়্যারহাউজে নেওয়ার জন্য ল্যান্ডিং চার্জ হিসেবে যে অর্থ আদায় করা হচ্ছে, তা নিয়মবহির্ভূত এবং ব্যবসায়ের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা।
গত সপ্তাহে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এই চার্জ বাতিলের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, চার্জ আদায় করার কথা আমদানিকারক নিয়োগকৃত ফরোয়ার্ডারের কাছ থেকে। কিন্তু ব্যবসা পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ফরোয়ার্ডারের কাছ থেকে টাকা আদায় না করে রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে।
তবে বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডেপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) এর নেতারা বলছেন, বিজিএমইএর এই দাবি অযৌক্তিক। তাদের মতে, বিদ্যমান আইসিডি নীতিমালায় এই চার্জ কার কাছ থেকে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই। এই ফি নির্ধারণের জন্য ট্যারিফ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরেও তা হয়নি।
এদিকে, দেশে আমদানি রপ্তানির পরিমান বাড়তে থাকলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়েনি। ফলে রপ্তানিবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের বেশিরভাগ কাজই এখন সম্পন্ন হচ্ছে বেসরকারি আইসিডিগুলোর মাধ্যমে।
খাত সংশ্লিষ্টদের থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৮টি বেসরকারি আইডিসি রয়েছে, যারা রপ্তানি পন্যের প্রায় ৯০ শতাংশই হ্যান্ডেল করছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী আরএমজি বাহী কন্টেইনারের পুরোটাই পরিচালনা করছে তারা।
রপ্তানিকারকের ট্রাক থেকে পন্য বুঝে নিয়ে রপ্তানিবাহী জাহাজে তোলার দায়িত্ব পালন করছে এই আইসিডিগুলো। এই পুরো প্রক্রিয়াকে স্টাফিং সাইকেল বলে।
এছাড়া, আমদানিকৃত পন্যের ২০ শতাংশের মত হ্যান্ডেল করছে এই আইসিডিগুলো।
গত ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, আইসিডিগুলো কার্টন নামানো চার্জ (ছোট কার্টনের জন্য ট্রাক প্রতি ৫ হাজার টাকা) এবং আইসিডি নীতিমালা বহির্ভূত ল্যান্ডিং চার্জ নামে বেআইনিভাবে অর্থ আদায় করছে। একে আইসিডির নীতিমালা বহির্ভূত বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
এমনকি এ কারনে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সক্ষমতা হারাচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।\
এ পরিস্থিতিকে 'জিম্মি অবস্থা' আখ্যা দিয়ে বিজিএমইএ'র সভাপতি ওই চিঠিতে বলেন, বেপরোয়া মনোভাবে নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূতভাবে চলছে আইসিডি।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ল্যান্ডিং চার্জ নামে বেআইনিভাবে অর্থ আদায় বন্ধ করতে বিকডা ও ফরোয়ার্ডারদের চিঠি দেওয়ার কথা বলা হয় চিঠিতে। এছাড়া, ট্যারিফ কমিটির চিঠি ছাড়া বর্ধিত চার্জ আদায়ের জন্য বিকডা কর্তৃক জারি করা সার্কুলার স্থগিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ফ্রেইট অন বোর্ড (এফওবি) অনুযায়ী, রপ্তানিকারকদের দায়িত্ব হলো বন্দরে পণ্য সেগুলোর পরিবহনে (ট্রাক) করে পৌঁছে দেওয়া। বন্দরের সক্ষমতা কম হওয়ায় তারা বেসরকারি খাতে আইসিডিকে এ দায়িত্ব দিয়ে তাদেরকে ব্যবসায়ের সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের ব্যয় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বন্দরে পণ্য পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত রপ্তানিকারকদের দায়িত্ব। অবশ্য এ কারনে রপ্তানিকারকদের কী পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে, সে বিষয়ে কোন তথ্য জানাতে পারেন নি তিনি।
এদিকে বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়্যুম খান টিবিএসকে বলেন, "বিজিএমইএর এ দাবি অযৌক্তিক। রপ্তানিকারকরা এই চার্জ পরিশোধ করবে না, এটি নীতিমালার কোথাও বলা নেই। এই চার্জ ট্যারিফ কমিটি নির্ধারণ করবে বলা হলেও, এখনো কোন কমিটি গঠন হয়নি।"
২০১৬ সালের আইসিডি নীতিমালার সংশ্লিষ্ট ধারায় এই চার্জ কে পরিশোধ করবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়, এমএলও বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারের পক্ষে প্রাইভেট আইসিডি হতে কন্টেইনার চুক্তি অনুযায়ী বন্দর পর্যন্ত পরিবহন করবে। প্রাইভেট আইসিডি হতে বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য চার্জের সর্বোচ্চ হার ট্যারিফ কমিটি নির্ধারণ করবে।
বিকডার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি কন্টেইনার বা ট্রাক থেকে পন্য আইসিডির ওয়্যারহাউজে নেওয়র জন্য কার্টনপ্রতি তিন টাকা হারে ধার্য্য রয়েছে। এর ফলে একটি ট্রাকে কন্টেইনার থেকে পন্য গুদামে নেওয়া পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত তারা পান। মোট রপ্তানির ১০ শতাংশের মতো পণ্যে এর পরিমাণ দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
গত নভেম্বর থেকে তারা এই চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।